Select Page

অন্ত্রের কৃমি (Intestinal Worm), আক্রান্তের লক্ষণ, কারণসমূহ, স্ব-সহায়ক আপদকালীন প্রতিকারের নির্দেশিকা

অন্ত্রের কৃমি (Intestinal Worm), আক্রান্তের লক্ষণ, কারণসমূহ, স্ব-সহায়ক আপদকালীন প্রতিকারের নির্দেশিকা

মানব দেহ বিভিন্ন ধরণের কৃমির আতিথেয়তা পালন করে যা বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে। অন্ত্রের কৃমি হল অন্ত্রের দেওয়ালের পরজীবী । বিশ্বব্যাপী শিশু ও প্রাপ্তবয়স্করা এই সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরণের কৃমি হয় যা মানুষকে প্রভাবিত করে এবং সবথেকে ক্ষতিকারক হল Pinworms (গুঁড়া কৃমি), Roundworm (গোল কৃমি ) , Hookworm (বক্র কৃমি ), Flatworm (চ্যাপ্টাকৃমি) ইত্যাদি।

কৃমি আক্রান্তের লক্ষণঃ

অনেক সময়েই দেখা যায়, বাচ্চার মেজাজ ভালো থাকে না । গুঁড়া কৃমির কারণে পায়ুদ্বারে চুলকানি হয় এবং চুলকানির কারণে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে । ঘন ঘন পেটে ব্যথা, সঙ্গে বমি ভাব ও খিদে কম পাওয়া, অত্যাধিক খিতে পাওয়া,  অকারণেই থুতু ফেলতে থাকা, খিমচে দেওয়া, কামড়ে দেওয়া ইত্যাদি অন্যান্য কৃমি দ্বারা আক্রান্তের অন্যতম লক্ষণ। অনেক সময়ে মলের মাধ্যমেও কৃমি বেরিয়ে আসে।

বড়দের ক্ষেত্রে রক্তাল্পতা,ঘন ঘন মাথাযন্ত্রণা, দুর্বলতা, ওজন হ্রাস, জ্বর, গা গোলানো ইত্যাদি লক্ষণ ও দেখা দেয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে যোনিপথে কৃমি প্রবেশ করলে প্রচুর সাদা স্রাব এর লক্ষণ ও চুলকানির লক্ষণ দেখা যায়। কখনো কৃমি পিত্ত থলিতে প্রবেশ করে পিও রস নিঃসরণ বন্ধ করে দেয়, ফলে জণ্ডিসের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

Intestinal Worm

সাধারণত মলমূত্র, নখের ময়লা ইত্যাদির মাধ্যমেই কৃমি শিশুদের শরীরে প্রবেশ করে থাকে। পানীয় জলের মাধ্যমেও কৃমির সংক্রমণ হতে পারে। অনেক শিশুই খেলতে খেলতে মুখে হাত দেয়, এমনকি খেলনাও মুখে পুরে ফেলে। আবার মাঠেঘাটে খালি পায়ে হাঁটার মাধ্যমেও কিন্তু কৃমি শরীরে প্রবেশ করতে পারে। বাচ্চারা হামাগুড়ি দিতে শুরু করলে বা নতুন হাঁটতে শেখার সময় থেকেই কৃমির সংক্রমণ শুরু হয়।

অন্ত্রে কৃমি হওয়ার বা ছড়ানোর প্রধান কারণসমূহঃ

 

১) দূষিত খাদ্য ও জলের মাধ্যমে এরা শরীরে প্রবেশ করে।

২) খাবার ঢেকে না রাখলে মাছি দ্বারা খাবারে এ জীবাণু ছড়ায়।

৩) যৌনমিলন এবং নাক ও ত্বক হল ট্রান্সমিটিং এজেন্ট ত্বকের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে।

৪) সঠিক স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলা।

৫) পরজীবী সংক্রামিত জায়গার সংস্পর্শ।

৬) দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।

৭) কাঁচা ও ঠিকমত রান্না না করা মাংস এবং বাসি খাবার খাওয়ার কারণে কৃমি হয়।

৮) মলত্যাগ করার পর ভাল করে সাবান দিয়ে হাত না ধুলে কৃমি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।

Intestinal Worm

স্ব-সহায়ক নির্দেশিকা এবং প্রতিকারঃ

 

১) হাতের ও পায়ের নখ ছোট রাখতে হবে, কিছু দিন অন্তর শিশুরও নখ কেটে নিতে হবে নখ খাওয়ার বদভ্যাস বন্ধ করতে হবে।

২) শুষ্কতা এবং তাপ ডিম মেরে ফেলে অতএব, যখন চিকিৎসা চলবে তখন নাইট ক্লোথ এবং তোয়ালে গুলি প্রতিদিন কুসুম গরম জলে পরিষ্কার করা উচিত।

৩) ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি এবং গৃহস্থালির পরিচ্ছন্নতা  ও ঘনঘন সাবান  হাত ধোঁতে হবে, বিশেষ করে খাবারের আগে ও টয়লেট ব্যবহারের পরে।

৪) প্রতিরোধের জন্য পর্যাপ্ত স্যানিটেশন ব্যবহার করা এবং অপরিষ্কার শাকসবজি এবং কাঁচা ও বাসি খাবার, দূষিত পানি সেবন থেকে বিরত থাকা উচিত।

৫) সন্তানের খাবার, জল, এমনকি ন্যাপি বদলানোর আগে ওপরে  হাত ভাল করে সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

৬) বাইরে থেকে খেলে বা ঘুরে এলে অবশ্যই ভাল করে সাবান দিয়ে তার হাত-পা ধুয়ে ফেলতে হবে।

৭)  ফল, আনাজপাতিও বাজার থেকে এনে লবণ জলে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে।

৮) লজেন্স, চকলেট, মিষ্টিজাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে।

 

আপদকালীন চিকিৎসাঃ

১) তিন থেকে পাঁচ বছরের বাচ্চাদের জন্য জোয়ান বা আজোয়াইন (Trachyspermum ammi) চূর্ণ ১/২ গ্রাম ও সমপরিমাণ আখের গুঁড় মিশিয়ে গুলি তৈরি করে প্রতিদিন ৩ বেলা খাওয়ার আগে খেতে দিতে হবে। (সকল ক্ষেত্রে আজোয়াইন ব্যবহারের পূর্বে হাল্কা ভেজে নিতে হবে)

২) বড়দের ক্ষেত্রে সকালে খালিপেটে  ২০ গ্রাম আখের গুঁড় খাওয়ার ৩০ মিনিট পর ১ গ্রাম আজোয়াইন (Trachyspermum ammi) খেতে হবে। তারপর ১ চামচ ত্রিফলা চূর্ণ আধা কাপ গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেতে হবে একটানা ৭ দিন।

৩) কাঁচা পেঁপের ল্যাটেক্সের মধ্যে পেপেইন নামক এনজাইম থাকে। এই এনজাইমের  এন্টিহেলমেনথিক বৈশিষ্ট্য থাকে, যা কৃমি ধ্বংস করে। ৪ চামচ জলের মধ্যে ১  চামচ মধুর সাথে কাঁচা পেঁপের রস মিশিয়ে খালি পেটে খান। তারপর ১ চামচ ত্রিফলা চূর্ণ আধা কাপ গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেতে হবে একটানা ৭ দিন। পেঁপের বীজের মধ্যে কারিসিন থাকে যা অন্ত্র থেকে কৃমি দূর করে । খালি পেটে  গরম জল বা দুধের সাথে পেঁপের বীজের পাউডার মিশিয়েও খেতে পারেন। (গর্ভবতীদের জন্য প্রযোজ্য না ।

৪) নিমের অ্যান্টি-প্যারাসাইটিক গুণ, প্যারাসাইট ধ্বংস করে এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করে। নিম পাতার রস ৪-৫ ফোঁটা + ১/২ চামচ জোয়ান + ৫ গ্রাম আঁখের গুঁড় গুলি করে বানিয়ে ৭ দিন সকালে খালি পেটে খাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া চুলকানো স্থানে নিম তেলের মালিশ ও করা যেতে পারে।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আয়ুর্বেদে আরো অনেক কার্যকরী যৌগিক কৃমি নাশক যোগ রয়েছে। উপরিউক্ত চিকিৎসায় রোগী বিশেষ ফল লাভ না হলে, বিশেষজ্ঞ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। 

Author Details

Sirajum Munira

Diploma in Ayurvedic Medicine and Surgery

Tmss Feroza Begum Unani and Ayurvedic Medical College and Hospital

About The Author

Sirajum monira

লেখিকার জন্ম ২০০০ সালের ২ জানুয়ারি বাংলাদেশের বগুড়া জেলার ধুনট অফিসার পাড়া জন্মগ্রহন করেন । তিনি শিক্ষাজীবনে মাধ্যমিক ধুনট এন ইউ পাইলট হাই স্কুল থেকে,এবং উচ্চ মাধ্যমিক ধুনট ডিগ্রি কলেজ থেকে ইন্টারমিডেট পাশ করেন। ২০১৬ সালে মাধ্যমিক শেষে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার পাশাপাশি Tmss Feroza Begum Unani and Ayurvedic Medical College and Hospital,, ৪বছর মেয়াদি DAMS ডিপ্লোমা কোর্স করেন (Diploma in Ayurvedic Medicine and Surgery).

Pin It on Pinterest

Share This

Share This

Share this post with your friends!