Select Page

আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা দর্শনঃ পর্ব ৫ (কার্য – কারণ সিদ্ধান্ত ) ও পর্ব ৬ (অগ্নি সিদ্ধান্ত)

আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা দর্শনঃ পর্ব ৫ (কার্য – কারণ সিদ্ধান্ত ) ও পর্ব ৬ (অগ্নি সিদ্ধান্ত)

কার্য – কারণ সিদ্ধান্ত

আয়ুর্বেদ মতে প্রতিটা কার্যর ই কোন না কোন কারণ থাকে। এই তত্ত্ব এই জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে কোন রোগ হলে অবশ্যই কোন না কোন কারণ থাকে৷ সেই কারণকে খুঁজে শুধরে নিলেই রোগটা আর বাড়ে না, ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

মানুষিক দিক থেকে চিন্তা করলেও এই তত্ত্ব খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সব সময় অল্প কিছু খারাপেই হতাস হয়ে যাই। আমাদের খারাপ কিছু হওয়ার পিছনেও কারণ থাকে এই চিন্তা করলে মানুষিক অশান্তি অনেকটা লাঘব হয়। তাছাড়া পাপ কর্ম থেকেও দূরে থাকা যায় এই তত্ত্বজ্ঞান থাকলে।

আয়ুর্বেদ শুধুমাত্র চিকিৎসা শাস্ত্রই না একটা পরিপূর্ণ জীবন বিধান যা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব কিছু শিখায়, আধুনিক শাস্ত্রে যার খোঁজ পাওয়া অসম্ভব।

অগ্নি সিদ্ধান্ত

সংস্কৃত অগ্নির গভীর মানে হলো রূপান্তর। এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় রূপান্তর। পৃথিবীর সব কিছুর রূপান্তর ঘটে অগ্নির মাধ্যমে। আমরা যা খাই তার রূপান্তর করায় জঠরাগ্নি, জঠরাগ্নির পরিবর্তিত রূপকে ধাতুর পুষ্টির জন্য দান করে ধাতুঅগ্নি। সব কিছুই সবশেষে পঞ্চ মহাভুত হিসাবে বিলীন হয়ে যায় সেই অগ্নিকে বলে ভুতাগ্নি। তাহলে সকল খাবার ই শরীরের আকাশ, বায়ু, অগ্নি, জল, পৃথিবীতে বিলীন হয়ে যায়।

সকল রোগের মুল কারণ পেটের সমস্যা। এই পেটের সমস্যা থেকেই সব রোগের সৃষ্টি হয়। প্রাথমিক অবস্থায় পেটের সমস্যা ঠিক করা সহজ কিন্তু ধীরে ধীরে সেই সমস্যার সমাধান না হলে রোগ অন্য দিকে মোড় নেয়।

ক) আকাশ ও বায়ু বেড়ে গেলেঃ পেট ফুলে যায়, পেটে গ্যাস উৎপন্ন হয়, পায়খানা পরিষ্কার হয় না ও রুক্ষ হয় (constipation)। আকাশ ও বায়ু বেড়ে গেলে গরম পানি খেতে হবে, মধু খেতে হবে, আদা খাওয়া যাবে তবে ক্ষুধা না লাগা পর্যন্ত খাবার খাওয়া যাবে না। ঠাণ্ডা খাবার খাওয়া যাবে না। খাবার খেলে খাবারের সাথে ঘি খেতে হবে।

খ) অগ্নি বেড়ে গেলেঃ শরীরের তাপমাত্রা হাল্কা বেড়ে যায়, পেটের দিকে তাপমাত্রা বেড়ে যায়, চোখ ,চামড়া ও মূত্র হাল্কা হলুদে হয়ে যায়। অগ্নি বেড়ে গেলে হাত মুখ বেশী বেশী ধুইতে হবে, কোন ঝাল খাবার খাওয়া যাবে না, রোদে যাওয়া যাবে না এবং ক্ষুধা না লাগা পর্যন্ত খাবার খাওয়া যাবে না।

গ) জল ও মাটি বেড়ে গেলেঃ শরীর ভারী ভারী লাগে, ক্ষুধা কমে যায়। জল ও মাটি বেড়ে গেলে এক বেলা না খেয়ে থাকা এই ধাপের সবচেয়ে উত্তম প্রতিরোধ। খাবার খেলে ঠাণ্ডা খাবার খাওয়া যাবে না। সাথে হাঁটাহাটি বা সামান্য ব্যায়াম করে শরীর ঘামানো যেতে পারে। এতে শরীরে লঘুতা তৈরি হবে।

মানুষের মধ্যে আকাশ, বায়ু, অগ্নি, জল, মাটি এই পাঁচটি উপাদানের গুণ রয়েছে । এরা, মানুষের রোগের বিভিন্ন ধাপে বিভিন্ন রকম আচরণ করে। রোগের ধাপ ৬ টি

১) সঞ্চয়ঃ এটি রোগের প্রথম ধাপ, এই ধাপের সুচনা হয় পেট থেকে। অর্থাৎ মানুষের রোগের উৎপত্তি স্থল হল পেট।

Ayurveda Philosophy

আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা দর্শনঃ পর্ব ৬

২) প্রকোপঃ এটি রোগের দ্বিতীয় ধাপ, আগের দোষগুলা যদি মানুষ ঠিক না করতে পারে তবে রোগ হওয়ার জন্য দোষ প্রকোপিত বা বাড়তে হতে থাকে।

৩) প্রসারঃ এই ধাপে দোষ তাদের উৎপত্তি স্থল থেকে বের হয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাঘুরি করতে থাকে।

৪) স্থান ধারণঃ এই ধাপে শরীরের যে অঙ্গ দুর্বল, যে খানে শূন্যতা পায় রোগ সে স্থানে বাসা বাঁধে, এই ধাপে রোগের পূর্ব লক্ষণ দেখা যায়। এই ধাপে চিকিৎসা সহজ।

৫) ব্যক্তবস্থাঃ এই ধাপে দোষ পুরোপুরি রোগে প্রকাশ পায় । এই ধাপে চিকিৎসা সময় সাধ্য

৬) অসাধ্যবস্থাঃ এই ধাপে রোগ অনেক গভীরে প্রবেশ করে, এবং যদি পঞ্চম ধাপেও চিকিৎসা ঠিক মতো না হয়, এই ধাপে চিকিৎসা এক প্রকার অসাধ্য হয়ে পরে।

আধুনিক বিজ্ঞান রোগের মূল কারণ বের করা থেকে অনেক পিছিয়ে। আয়ুর্বেদ মতে রোগের মূলত ছয়টি ধাপ । চার নাম্বার ধাপে পূর্বরূপ, পাঁচ ও ছয় নাম্বার ধাপে রোগ প্রকাশ পায়। কিন্তু সঠিক আয়ুর্বেদিক জ্ঞানে প্রথম তিন ধাপে মানুষ নিজেই নিজের চিকিৎসা সহজে করতে পারে। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় কালক্রমে এই জ্ঞান হারিয়ে গেছে।

প্রকৃতির সকল সৃষ্ট জীব জানে সকালে ঘুম থেকে উঠে কি করতে হবে, কিভাবে খাদ্য গ্রহন করতে হবে, কিভাবে ঘুমাতে হবে, এইটা basic instinct/ primary knowledge. প্রকৃতি প্রদত্ত এই জ্ঞান ই আয়ুর্বেদিক জ্ঞান। এই প্রকৃতি প্রদত্ত জ্ঞানকে alternative নামটা আধুনিকদের ই দেওয়া। কিন্তু এইটা সত্য যে মানুষের বিবেক আছে! সত্য কখনই কালের চাপায় হারিয়ে যায় না, সত্য আবার জাগবে যখন তার প্রকাশিত হবার সময় হবে!

 

AUTHOR

DEVOJYOTI DUTTA 

BIOTECHNOLOGY AND GENETIC ENGINEERING 

BACHELOR OF AYURVEDIC MEDICINE AND SURGERY (STUDENT)

 

 

About The Author

Devojyoti Dutta

লেখকের জন্ম ১৯৯৩ সালের ১০ ই জুন বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলায় জন্মগ্রহন করেন । তিনি শিক্ষাজীবনে মাধ্যমিক কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে, এবং উচ্চ মাধ্যমিক কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে পড়াশোনা করেন। পরবর্তীতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োটেকনোলোজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতক পাশ করেন ২০১৬ সালে। তিনি পড়াশোনা শেষ করে ESCO.Singapore এ চাকরি সুবাদে দেশ বিদেশ বিভিন্ন জায়গা ঘুরে প্রকৃতি নিয়ে জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি ২০১৮ সালে ভারত সরকার কর্তৃক প্রদানকৃত আইসিসিআর বৃত্তি লাভ করে ভারতের রাজস্থান রাজ্যের রাজধানী জয়পুরে "National Institute of Ayurveda (Deemed to be University)" এ Bachelor of Ayurvedic Medicine and Surgery বিষয়ে পড়াশুনা করছেন।

Pin It on Pinterest

Share This

Share This

Share this post with your friends!