Select Page

আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা দর্শনঃ পর্ব ১

আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা দর্শনঃ পর্ব ১

আয়ুর্বেদ শব্দটি “আয়ু” এবং “বেদ” থেকে এসেছে। “আয়ু” শব্দের অর্থ জীবন, বেদ শব্দের অর্থ জ্ঞান। জীবনে শারিরীক, মানসিক ও আত্মিকভাবে সুস্থ থাকার যে জ্ঞান, সেই জ্ঞানই আয়ুর্বেদ। আয়ুর্বেদ এর উৎপত্তি হয়েছে মুলত যখন থেকে সৃষ্টিতে অসুস্থতার প্রকাশ হয়েছে। এ জ্ঞান স্রষ্টা থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান, যা সমাজের কল্যানের জন্য আপ্ত পুরুষদের মাধ্যমে স্রষ্টা তাঁর বার্তা পাঠিয়েছেন। তাই আয়ুর্বেদকে গভীরে খুঁজলে নিজেকে জানা যায়, আর নিজেকে জানার মাধ্যমে স্রষ্টাকে জানা যায়। ঋকবেদ, সামবেদ, যদুর্বেদ, অর্থবেদ এর জীবন ও স্বাস্থ্য বিষয়ক অনেক শ্লোকের জ্ঞান আয়ুর্বেদ এর প্রথম পুর্নাঙ্গ লিখিত গ্রন্থ অগ্নিবেশ তন্ত্রে সংকলন করা হয়। তাই আয়ুর্বেদকে পঞ্চম বেদ ও বলা হয়। অনেকে উপবেদ হিসাবে আখ্যায়িত করেন ।

 

চিকিৎসা ক্ষেত্রে আয়ুর্বেদ এর কিছু স্বকীয় দর্শন রয়েছে যা প্রমান করে আমরা সবাই এক স্রষ্টা থেকে সৃষ্টি এবং এনার্জি লেভেল এ সবার একে অপরের সাথে সুক্ষ্ণভাবে যোগ সুত্র রয়েছে। আয়ুর্বেদ এর প্রতিটি গভীর দর্শন নিয়ে আলোচনা ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই দর্শণের প্রভাব নিয়ে আলোকপাত করা তাই অত্যন্ত জরুরি।

 

আয়ুর্বেদ এ কিছু স্বকীয় সিদ্ধান্ত সিদ্ধান্ত রয়েছে যেমন ১) আয়ু সিদ্ধান্ত, ২) পঞ্চ মহাভুত সিদ্ধান্ত, ৩) দোষ – ধাতু – মল সিদ্ধান্ত, ৪) সামান্য – বিশেষ সিদ্ধান্ত, ৫) কার্য – কারণ সিদ্ধান্ত, ও ৬) অগ্নি সিদ্ধান্ত

 

 

১) আয়ু সিদ্ধান্তঃ

 

এইটি প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। আয়ুর্বেদ এ আয়ু বলতে বোঝায় শরীর, পঞ্চ ইন্দ্রিয়, মন, ও আত্মা। চিকিৎসায় এই সিদ্ধান্ত খুব গুরুত্বপূর্ণ কেননা বাহ্যিক রোগ যেমন মানসিক ও আত্মিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে, আত্মিক রোগ ও তেমন শারিরীক ও মানুষিকভাবে একজন ব্যাক্তিকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে । মানষ পঞ্চ ইন্দ্রিয় দ্বারা নফস এর তাড়নায় যে পাপ করে তা মানুষকে আত্মিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে যতক্ষন পর্যন্ত না সে পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়। 

 

আয়ুর্বেদ মতে প্রজ্ঞা অপরাধ মানুষের শারিরীক, মানসিক ও আত্মিক রোগের অন্যতম বড় কারণ। কোন জিনিস এর যেমন অর্থ হওয়ার কথা ছিল তার অর্থ ভুলভাবে নির্নয় করা, ভুলভাবে ধারণ করা, এবং ভুলভাবে অন্য সম্মুখে উপস্থাপন করাই হলো প্রজ্ঞাপরাধ। সঠিক জ্ঞান না হওয়া পর্যন্ত অন্তরে সংঘর্ষ চলতে থাকে।

 

সকল কর্ম “আমি” করি এই চিন্তা এক ধরণের প্রজ্ঞা অপরাধ, যা মানুষের মধ্যে ইগো (EGO) তৈরি করে, ফলশ্রুতিতে যখন ই ব্যর্থ হয় তখন ই সে মানসিকভাবে হতাসায় ভুগে। অন্যদিকে সকল কর্ম “স্রষ্টা করান” এই উন্নত চিন্তা মানুষকে অনেক ধরণের মানসিক অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে।

 

যড়ঋপু হলো প্রজ্ঞাপরাধ এর দরজা। ষড় ঋপুগুলো হল। ১. কাম – যৌন সঙ্গকামনা, যৌনক্ষুধা (Sex urge), ২. ক্রোধ – রাগ, উত্তেজনার বশীভূত হওয়া (Anger), ৩. লোভ – লালসা  (Cupidity), ৪. মোহ, মিথ্যা মায়া, বিভ্রম (Illusion) ৫. মদ – অহংকার, গর্ব, আত্মগৌরব (Arrogance), ৬. মাৎসর্য – পরশ্রীকাতরতা, অন্যের ভালো দেখতে না পারা (Envy)। 

 

একই ভাবে সকল প্রকার পাপ কর্ম ও মানুষের শরীরে রোগ সৃষ্টির জন্য অন্যতম বড় কারণ। পাপ বলতে আয়ুর্বেদ এ বোঝায় যে কাজ করলে নিজের বা অন্যের ক্ষতি হয় তা ই পাপ। আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের ১) অতিরিক্ত ব্যবহার, ২) অব্যবহার, ও ৩) মিথ্যা ব্যবহার আমাদের শরীরের মারাক্তক ক্ষতি সাধন করে বিধায় এইগুলাকেও পাপের অন্তর্ভুক্ত করা যায়। অতিরিক্ত ব্যবহার বলতে বোঝায় একটানা অনেক সময় ধরে কোন ইন্দ্রিয় এর ব্যবহার করা। সারাক্ষন মোবাইল, লেপটপ চালানো বর্তমানের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। অব্যবহার বলতে বোঝায় সঠিক জায়গায় ব্যবহার না করা, যেমন কম আলোতে পড়া উচিত না, বা অন্ধকারে মোবাইল চালানো উচিত না তবু তা করা। আর মিথ্যা ব্যবহার বলতে বোঝায় সরাসরি ইন্দ্রিয় দ্বারা পাপকার্য করা। যেমন খারাপ শব্দ শোনা, খারাপ কথা বলা, খারাপ চিন্তা করা ইত্যাদি। 

 

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান শারীরিক ও মানুষিক গবেষনা কেন্দ্রিক কিন্তু আত্মাকে পরীক্ষন ও নিরিক্ষন করা যায় না বলে অস্তিত্ব থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় নি, যা আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রের অন্যতম ত্রুটি। তাই আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান কখনোই পরিপূর্ণ চিকিৎসা ব্যবস্থা নয়। 

 

TO BE CONTINUED……

 

AUTHOR 

DEVOJYOTI DUTTA 

BIOTECHNOLOGY AND GENETIC ENGINEERING 

BACHELOR OF AYURVEDIC MEDICINE AND SURGERY (STUDENT)

 

 

About The Author

Pin It on Pinterest

Share This

Share This

Share this post with your friends!