Select Page

পেটফাঁপা (Gas/Flatulence) লক্ষণ, কারণসমূহ, স্ব-সহায়ক আপদকালীন প্রতিকারের নির্দেশিকা

পেটফাঁপা (Gas/Flatulence) লক্ষণ, কারণসমূহ, স্ব-সহায়ক আপদকালীন প্রতিকারের নির্দেশিকা

অনেক সময়,অন্ত্রের গ্যাস একটি হাস্যরসের কারণ। তবে যে ব্যক্তি লোক সম্মুখে গ্যাস/পেটফাঁপা  অনুভব করে তার পক্ষে এটি মোটেও হাস্যকর বিষয় নয়। বর্তমানে প্রায় ৩০/৪০ শতাংশ লোক পেট ফেঁপে  যাওয়া বা গ্যাসের সমস্যার সম্মুখীন হয়ে কষ্টকর অভিজ্ঞতা অর্জন করে যাচ্ছেন। যা তারা  আন্ত্রিক সমস্যা কে দায়ী করে।

আমরা যা খাই তা সবই হজম হয় না। খাদ্যের এ অপাচ্য, অশোষিত ও পুষ্টি হীন অংশ কোলন দিয়ে যাওয়ার সময় কয়েক ঘন্টা সেখানে অবস্থান করে। অপাচ্য, অশোষিত অংশ  কোলনিক ব্যাকটেরিয়ার ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়ায় কারণে গ্যাস (যেমন-হাইড্রোজেন সাল-ফাইড ) উৎপন্ন হয় ।

  Gas/Flatulence

উদরে গ্যাস/পেটফাঁপার বিভিন্ন কারণ সমূহ (Etiology of flatulence):

  • খাদ্য চর্বন ভাল না হলে বা দ্রুত খাবার গ্রহনের ফলে  লালার সঙ্গে বুদবুদ  আকারে অতিরিক্ত গ্যাস উদরে যায়।
  •  পাইপ বা সিগারেটের ধোঁয়া (ধুমপান করা) লালা ক্ষরণ বাড়ায়, যা উদরস্থ অতিরিক্ত গ্যাসের জন্য দায়ী।
  • কারো কারো অধিক ঢেকুর তোলার বদ অভ্যাস আছে এতেও উদরে গ্যাস বেড়ে যায়।
  • চুইংগাম ও ক্যান্ডি চোষার কারণে ও উদরে গ্যাস বাড়ে।
  • ঠান্ডা পানীয় (Carbonated beverage) থেকেও উদরে কিছু গ্যাসের সৃষ্টি হয় তাই (কোমল পানীয়) পরিত্যার্য।
  • শীম/বরবটি ( মটরশুঁটি) পেটে গ্যাস সৃষ্টি করে। কারণ এর জটিল/মিশ্র অনমনীয় শর্করা পরিপাক হয় না। এগুলো কোলনে ব্যাকটেরিয়া কৃর্তক ফার্মেন্টেশনের মাধ্যমে তারা(ব্যাকটেরিয়া) খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে এবং উপজাত পদার্থ হিসাবে গ্যাস উৎপন্ন হয়।
  • পূর্ণাঙ্গ বয়সে কারো দুধ হজম না হলে পেটে গ্যাস, পাকস্থালির খিঁচুনী ও ডায়রিয়া হয়।
  • নিদ্রাকারক ঔষধ ও ক্যালসিয়াম জাতীয় কিছু ঔষধ পরিপাক নালির গতিকে মন্থর করে। এতেও পেটে গ্যাস সৃষ্টি হয়।
  • বিরুদ্ধ ভোজন যেমন, ডিম+দুধ  বা দুধ+মাংস, একসাথে গ্রহণ করা এর ফলে পেটে অতিরিক্ত বায়ুর সঞ্চয় হয়।
  • স্ন্যাকস জাতীয় খাবার , তেলে ভাজা খাবার (process food) গ্রহণ করলে  উদরে গ্যাস বৃদ্ধি পায়।
  • ক্ষুধা না লাগলেও বার বার খেলে খাবার ঠিকমতো পাঁচন না হয়ে গ্যাস হতে পারে।।
  • গ্যাস বাড়ায় যেসব খাদ্য সমূহ সেসব খাদ্য পরিমাণমতো খেতে হবে।

মটরশুটি, বাদাম (বিশেষ করে চীনাবাদাম এবং কাজু-বাদাম), ডাল (মাষকালায়,মসুর এবং বুট/ছোলা) সবজির মধ্যে যেমন আলু, বাঁধাকপি, পেঁয়াজ, রসুন, ফুলকপি, মুলা, শসা, মটরশুঁটি  ব্রকলি, গোটা শস্য  জাতীয়। ফলের মধ্যে, আপেল, কিসমিস, কলা। দুগ্ধজাত তৈরি খাবার এবং দুধ, ডিম, অধিক চর্বিযুক্ত খাবার, সোয়াবিন তেল, ভাজাপোড়া খাবার। রান্না করা হয়নি এমন চাটনি, সস, গ্রেভি,পেস্ট্রি, এসব খাবার এড়িয়ে চলুন।

 

চিকিৎসা সূত্র (Line of treatment):

আয়ুর্বেদে পেটফাঁপাকে (Flatulence) আধ্মান বলে।  চিকিৎসা পদ্ধতি দীপন (অগ্নি বা হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি কারক), পাচন (digestive) এবং বায়ুর অনুলোমন (Carminative) ওষুধি প্রয়োগ করতে হবে।

পেটফাঁপা (Gas/Flatulence) এর আয়ুর্বেদিক আপদকালীন চিকিৎসা পদ্ধতিঃ 

১) এককাপ উষ্ণ গরম পানিতে ২ ফোঁটা পুদিনা পাতা রস + দারুচিনি/গোলমরিচ অথবা আদার রস মিশিয়ে পান করতে হবে প্রতিদিন দুইবার ।

২) সমপরিমাণ আদা শুঠ(Dried ginger)+জোয়ান (ajwain) দ্বিগুণ চুনের পানিতে সিক্ত করতঃ শুকিয়ে তাতে সামান্য সৌর্চব্য লবন/সৈন্দব লবন (Himalaya Pink Salt) যোগে চূর্ণ করে ২ গ্রাম মাত্রায় গরম পানির সাথে সেবন করতে হবে ।

৩)  একটি ব্যাগে দুই মুঠো বাজরা (pearl millet)+ এক মুঠো স্ফটিক-লবন (Rock salt) নিয়ে তা প্লেটের উপর গরম করে পেটে সেক দিন এতে সঞ্চিত বায়ু অধঃপথে বেরিয়ে যাবে।

৪)  এক্ষেত্রে যদি ভুক্তভোগী শিশু হয় তাহালে-তুলার পশম/কাপড়ের প্যাডে সামান্য হিং রেখে গরম পানিতে সিক্ত করে পেটে শেক দিবেন।

৫) অথবা -এক ভাগ টারপিন তেল+দুই ভাগ ভেণ্ডার তেল (castor oil)একত্রে উষ্ণ গরম করে শিশুর পেটে মালিশ দিবেন। তেল মর্দনের পরে ভেণ্ডার/এরন্ড পাতা হালকা আঁচ দিয়ে পেটে বেধে দিতে পারেন।

তাছাড়া বিভিন্ন যৌগিক (Compound medicine) রয়েছে যা রোগীর অবস্থা অনুয়ায়ী চিকিৎসক পরামর্শ দেন যেমন ১)  হিঙ্গাষ্টক চুর্ণ ২) কুমারী আসব ৩) মহাগ্নি বটি  ৪) মহাশঙ্খ বটি,  ৫) বিষ্ণু তৈল (পেটে মালিশ করলে  বায়ু নিঃসারিত হয়)।

 

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরিউক্ত চিকিৎসায় রোগী বিশেষ ফল লাভ না হলে, বিশেষজ্ঞ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

 

Md. Imran Hossain 

Diploma in Ayurvedic Medicine and Surgery (DAMS),

TMSS Feroza Begum Ayurvedic and Unani Medical College and Hospital, Bogura.

About The Author

Md. Imran Hossain

লেখকের জন্ম ১৯৯৯ সালের ৩০ মে বাংলাদেশের বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ জন্মগ্রহন করেন। তিনি শিক্ষাজীবনে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক আলিয়ার হাট সিনিয়র ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসা থেকে সম্মানের সাথে উত্তীর্ণ হোন। পরবর্তীতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর অধীনে, বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে (স্নাতক) ইসলামীক স্টাডিজ চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত আছেন। ২০১৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শেষে স্নাতক পড়ার পাশাপাশি Tmss Feroza Begum Ayurvedic and Unani Medical College and hospital Bogura, থেকে ৪বছর মেয়াদি Diploma in Ayurvedic Medicine and Surgery (DAMS) বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন।।

Pin It on Pinterest

Share This

Share This

Share this post with your friends!