Select Page

ব্রণের আদ্যেপান্ত ও প্রাথমিক স্ব-সহায়িকা!

ব্রণের আদ্যেপান্ত ও প্রাথমিক স্ব-সহায়িকা!

ব্রণ (Acne vulgaris):

ব্রণ শারীরিকভাবে যেমন বেদনাদায়ক তেমনিভাবে অস্বস্তিকর। সমস্যাটি বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সাধারণত বেশি দেখা যায়। তবে প্রাপ্তবয়স্করাও আক্রান্ত হয়ে থাকেন, যেসকল প্রাপ্তবয়স্কদের ব্রণ আছে, তাদের জন্য এটি বয়ঃসন্ধিকালের চেয়ে আরও বেশি বিব্রতকর হতে পারে।

গবেষণায় উঠে এসেছে ২০১০ সালে সারা বিশ্বব্যাপী ৬৫০ মিলিয়ন মানুষের ব্রণ হয়েছিল, যা মোট জনসংখ্যার ৯.৪%। পাশ্চাত্যে প্রায় ৯০% মানুষের কৈশোরকালে ব্রণ হয়ে প্রাপ্তবয়স পর্যন্ত বিরাজ করে। বয়ঃসন্ধির পর থেকে শুরু করে ২৫ বছরের মধ্যে ৫৪% নারীর এবং ৪০% পুরুষের ব্রণ হয়।

👉কারণ (Etiology) :

আয়ুর্বেদিক মতে শরীরে পিত্ত দোষ অতি বৃদ্ধির কারণে যৌবন পিড়িকা/ব্রণ হয়ে থাকে। পিত্ত রক্ত ও মেদ ধাতুকে (রক্ত এবং চর্বি টিস্যুকে) দূষিত করে। যা ত্বকের ছিদ্রগুলিকে অবরুদ্ধ করে টক্সিন তৈরি করে এবং ব্রণ (Acne) গঠনের দিকে পরিচালিত করে। এছাড়াও খাদ্যাভ্যাস শিল্পায়ন ও কৃষির কারণে আজকাল যৌবন পিড়িকা(ব্রণ)মহামারী আকার ধারণ করছে।

 

👉স্ব-সহায়ক নির্দেশিকা

  • আপনার খাবারে সতর্ক হোন। দৈনন্দিন আপনি যে খাবার গ্রহন করছেন তার কারণেও ব্রণ বেড়ে যেতে পারে। আপনি যদি দুধের পণ্য, বাদাম, চর্বি, ভাজা এবং তৈলাক্ত খাবার, চকোলেট, হাইড্রোজেনেটেড তেল এবং চিনি এসকল খাবাবের প্রতি আসত্তি দেখান, তাহালে ব্রণ বেড়ে যাবে। এছাড়াও আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার, যেমন পনির, আয়োডিনযুক্ত লবণ এবং কাঁকড়া ব্রণের সাথে যুক্ত, এসকল খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
  • অনুপযুক্ত ও অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, তৈলাক্ত, মশলাদার, মিষ্টি, চর্বিযুক্ত, ফাস্টফুড, ঠান্ডা পানীয় ত্রি-দোষের বিঘ্ন ঘটায়। এগুলো এড়িয়ে চলুন।
  • খাওয়ার পরপরই পরিশ্রম, রক্ত ​​ধাতুকে বিকৃত করে। যা যৌবন পিড়িকার জন্য দায়ী, সুতরাং খাবারের পর বিশ্রাম করুন।
  • অনেক ধরনের গর্ভনিরোধক বড়ি এবং কর্টিকোস্টেরয়েড সহ বেশ কিছু প্রেসক্রিপশনের ঔষধ থেকে ব্রণ হতে পারে বা বাড়িয়ে দিতে পারে। ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করুণ।
  • রাতে পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। কেননা রাত জাগলে পিত্তের প্রকোপ বেরে যায় এবং বর্ধিত পিত্ত রক্তকে দুষিত করে ব্রণ উৎপন্ন করে।
  • যেখানেই লালচে ভাব দেখবেন সেখানে একটি আইস কিউব (নরম কাপড়ে মোড়ানো) লাগান। এটি শুধুমাত্র লালভাব কমায় না, এটি প্রদাহ কমায় এবং ত্বক পিম্পল নিরাময়ে সাহায্য করে।
  • নিয়মিত আপনার শরীরকে সূর্য এবং বাতাসে উন্মুক্ত করুন, তবে রোদে পোড়াবেন না। তাজা বাতাস এবং প্রতিদিনের ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এবং আপনার হজম ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখুন।
  • আপনার বিছানার চাদর পরিষ্কার রাখুন, যেমন তেল, প্রসাধনী, চুল এবং চাদরের ময়লা এসব আপনার ব্রণের ছিদ্রকে আরও আটকে রাখবে। সুতরাং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
  • পিম্পলে(ব্রণে) চিমটি কাটবেন না। কারণ সেখান থেকে প্রদাহ হয়ে আরো খারাপ হতে পারে। এবং চেপে দিলে দাগ পড়ে যেতে পারে।
  • দিনে দু-তিনবার মুখ ধুয়ে নিন। আপনার ত্বক শুষ্ক করে এমন সাবান ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। তেল-ভিত্তিক প্রসাধনী এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলি আপনার ত্বকের ছিদ্রগুলিকে আটকে রাখে। ফলে ব্রণ বেড়ে যায়।
  • আবেগজনিত ব্যাধি, হজম এবং এন্ডোক্রিনাল ফাংশনকে ব্যাহত করতে পারে, যার ফলে তেলের অকার্যকর হজম হয় এবং ত্বকে তেলের সম্ভাব্য বৃদ্ধি ঘটে, যার ফলে ব্রণ হয়।

 

👉 রোগ নির্ণয়(Diagnosis) :

ব্রণের মাত্রা নিরূপণের কিছু পন্থা আছে, যা নিম্নোক্ত:

➡লিডস গ্রীডিং : সংক্রামতা এবং অসংক্রামতা নির্ধারণ করে (বিস্তার ০–১০)।
➡কুকস গ্রেডিং স্কেল: ছবি ব্যবহার করে মাত্রা নির্ধারণ করে (সবচেয়ে কম ০,সবচেয়ে বেশি ৮)।
➡পিলসবারি স্কেল: মাত্রা নির্ধারণ করে ১ (সবচেয়ে কম)-৪ (সবচেয়ে বেশি)।

👉 আয়ুর্বেদিক প্রতিকার(Ayurvedic remedies):

  • প্রথমে মাষকলাই পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে তার সাথে যব চুর্ণ+ময়দা মিশ্রিত করে ভালোভাবে বেটে ব্রণ আক্রান্ত স্থানে প্রলেপ দিলে ব্রণ মধ্যস্থ পূঁজ রক্ত সহজে বেড়িয়ে আসে।
  • দিনে ২/৩বার নিম ও পলতা পাতা সিদ্ধ পানিতে আক্রান্ত স্থান ধৌত করতে হবে।
  • কচি নিমপাতা ও তিল একত্রে বেটে প্রলেপ দিলে, অথবা নিমপাতা+যষ্টিমধু+দারু হরিদ্রার ছাল একত্রে বেটে ঘৃতমিশ্রিত করে প্রলেপ দিলে ব্রণ ক্ষত শুষ্ক হয়।
  • তিসি বা তোকমা অল্পপরিমান জল দিয়ে পুলটিস তৈরি করে ব্রণ আক্রান্ত স্থানে লাগান, এতে ব্রণ ফেটে ক্লেদ বেড়িয়ে আসবে।
  • ব্রণ আক্রান্ত স্থানের চিকিৎসার জন্য তুলসী পাতার আধান তৈরি করুন। এক কাপ ফুটন্ত জলে দুই থেকে চার চামচ শুকনো তুলসী পাতা রাখুন, এবং কিছুখন অপেক্ষা করুন, ঠান্ডা হলে আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করুন।
  • হলুদের গুঁড়া বা তুলসী পাতা এক বাটি জলে মিশান,যা সবেমাত্র ফুটানো হয়েছে। এবং একটি মিনি-স্টিম বাথ তৈরি করুন। এবং ধীরে ধীরে আপনার মুখ ধৌত করুণ। এভাবে ব্রণ ছিদ্র থেকে ময়লা এবং তেল খুব সহজে সরানো যায়।
  • কুমকুমাদি লেপ মুখ ধোয়ার পর লাগালে ভালো ফল পাওয়া যায়।
  • মাষকলাই,শিমুলছাল,লোধছাল,জবাফুল,তেলাকুচার পাতা, এগুলোর যেকোন একটি বেটে সামান্য ঘি মিশিয়ে প্রলেপ দিলে ব্রণ বসে যায়।
    আবার উপরোক্ত দ্রব্যের সাথে তেতুল মিশিয়ে প্রলেপ দিলে ব্রণ পেকে ফেটে যায়।
  • অল্প পরিমাণ জল দিয়ে চিনির একটি পুল্টিস তৈরি করুন; এবং ভালোভাবে মুখ ধুয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগান। চিনির একটি অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রভাব রয়েছে।
  • আমলকী+কাচা হলুদ+নিমপাতা চুর্ণ সমান মাত্রায় একত্রে বেটে ৫০০মিলি গ্রাম বটিকা তৈরি করুণ। রৌদ্রে ভালোভাবে শুকিয়ে দিনে দুইবার গরম পানি সহ সেবন করুণ। এতে আপনার রক্তদুষ্টি দূর হবে এবং ব্রণের প্রকোপ কমে যাবে।
  • সারিবাদ্যসব 15-30 মিলি সমান পরিমাণ জলের সাথে প্রতিদিন দুবার গ্রহণ করলে তা রক্ত ​​বিশুদ্ধকারী হিসাবে কাজ করে এবং ব্রণ নিয়ন্ত্রণ করে।

এছাড়াও বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ঔষধ রয়েছে যা রোগীর অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসক পরামর্শ দেন।

যেমন: বহরের ননী, সারিবাদি সালসা, মানিক্য রস, সারিবাদি বটি, পঞ্চতিক্ত ঘৃত গুগগুলু, নবকার্ষিক গুগগুলু, অমৃতাদি ক্বাথ, পটোলাদি ক্বাথ, সোমরাজী তেল, প্রভুতি।

পথ্যাদি(dietary requirement) :

পুরাতন শালি চাউলের ভাত, ঘৃতপক্ব মুগের বা বুটের ডাল,কাচা কলা পটোল,বেগুন, উচ্ছে/করলা, শালিঞ্চা শাক, হিঞ্চাশাক, পাট শাক, নটে শাক, বেতোশাক, নিমপাতা, সুষনি শাক,সৈন্ধবলবন,এবং তিত্ত ও কষায় রস বিশিষ্ট দ্রব্য উপকারী

About The Author

Md. Imran Hossain

লেখকের জন্ম ১৯৯৯ সালের ৩০ মে বাংলাদেশের বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ জন্মগ্রহন করেন। তিনি শিক্ষাজীবনে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক আলিয়ার হাট সিনিয়র ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসা থেকে সম্মানের সাথে উত্তীর্ণ হোন। পরবর্তীতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর অধীনে, বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে (স্নাতক) ইসলামীক স্টাডিজ চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত আছেন। ২০১৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শেষে স্নাতক পড়ার পাশাপাশি Tmss Feroza Begum Ayurvedic and Unani Medical College and hospital Bogura, থেকে ৪বছর মেয়াদি Diploma in Ayurvedic Medicine and Surgery (DAMS) বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন।।

Pin It on Pinterest

Share This

Share This

Share this post with your friends!