Select Page

আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা দর্শনঃ পর্ব ৩

আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা দর্শনঃ পর্ব ৩

দোষ – ধাতু – মল সিদ্ধান্তঃ

বাত, পিত, কাফকে আয়ুর্বেদ এ ত্রিদোষ বলে। এই ত্রিদোষ শরীরে সাত ধাতুর মধ্যে অবস্থান করে। রস, রক্ত, মাংশ, মেদ, অস্থি, মজ্জা ও শুক্র। যদিও ৭ টি ধাতুর সহজ নামকরণ করা হয়েছে এর গভীরতা অনেক ব্যপক। আয়ুর্বেদ মতে ক্রমানুসারে প্রতিটি ধাতু আগের ধাতু থেকে তৈরি হয়। যেমন রস ধাতু তৈরি হয় খাদ্য থেকে, রক্ত ধাতু তৈরি হয় রস ধাতু থেকে, মাংস ধাতু তৈরি হয় রক্ত ধাতু থেকে ইত্যাদি এইভাবে সর্বশেষ ধাতু হলো শুক্র ধাতু যা মজ্জা ধাতু থেকে তৈরি হয় । তার মানে শুক্র ধাতু ক্ষয় হলে শরীরের সব ধাতু ক্ষয় হয়। শুক্র ধাতু সব ধাতুর সার। তাই শুক্রকে অযথা স্খলন করতে না দেওয়া শরীর সুস্থ রাখার অন্যতম প্রধান কাজ।

প্রতিটা ধাতুরই মল রয়েছে। মল বলতে বোঝায় ধাতুর অপ্রয়োজনীয় অংশ। অস্থি ধাতুর মল হলো চুল বা শরীরের লোম। চুল পড়ে হাঁড়ের গঠন ঠিক না হওয়ার কারণে আর হাঁড়ের গঠন ঠিক হয় না যদি হজম ক্ষমতার সমস্যা থাকে। এইভাবে সারা শরীর একটি অপরটির সাথে জড়িত।

আমাদের শরীরে বায়োলজিক্যাল কারণে মল উৎপন্ন হয়। এই মল হলো শরীরের বিষ নাশক পদ্ধতি। পায়খানা, মুত্র ও ঘাম এই তিনটি শরীরের বর্জ্য নিষ্কাশন পদ্ধতি। এই সিস্টেম ঠিক মতো কাজ না করলে বড় বড় রোগ বাসা বাঁধে। তাই মল শরীরের খুবই গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক।

আয়ুর্বেদ এর চিকিৎসককে শরীরের সব অংশ খুব ভালভাবে জানতে হয় কেননা এক অংশ অন্য অংশের সাথে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত। এক অংশ, অন্য অংশের অবস্থার নির্দেশক বিধায় আয়ুর্বেদ বিজ্ঞান পরিপূর্ণ। আয়ুর্বেদ এ সুস্থ হওয়া মানে সম্পুর্ন শরীর নিরোগ হওয়া এবং চিকিৎসা ও সেই অনুসারেই করা হয় যেন চিকিৎসা করার সময় অন্য কোন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। এইজন্য আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় এক চিকিৎসা করাতে গিয়ে শরীরের অন্য অংশের ক্ষতির দিক ও বিবেচনা করা হয়। উদাহরণ সরূপ বলা যায় টিকা আবিষ্কার হয় কোন নিরদিষ্ট ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার বিপরীতে। কিন্তু সেই ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া ৫ বছর প্রকৃতিতে টিকে থাকার জন্য পর তার জাত ও প্রকৃতি পরিবর্তন করবে। কিন্তু আয়ুর্বেদ এ টিকার কোন কনসেপ্ট নাই বরং সম্পুর্ন শরীর যেন সঠিকভাবে কাজ করে সেজন্য রসায়ন আছে, স্বর্ণ প্রশন আছে। কেননা সম্পুর্ন শরীর সুস্থ থাকলে এমনিতেই ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া আক্রমন করতে পারবে না, সেইটা ৫ বছর পর প্রকৃতি পরিবর্তন করে হোক অথবা ১০ বছর। তাই শরীরের হোলিস্টিক জ্ঞান না থাকা বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থার অন্যতম ত্রুটি।

লেখক সম্পর্কেঃ

দেবজ্যোতি দত্ত, ব্যাচেলর অফ আয়ুর্বেদিক মেডিসিন এন্ড সার্জারী, রাষ্ট্রীয় আয়ুর্বেদিক সংস্থান, জয়পুর, রাজস্থান।

About The Author

Devojyoti Dutta

লেখকের জন্ম ১৯৯৩ সালের ১০ ই জুন বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলায় জন্মগ্রহন করেন । তিনি শিক্ষাজীবনে মাধ্যমিক কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে, এবং উচ্চ মাধ্যমিক কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে পড়াশোনা করেন। পরবর্তীতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োটেকনোলোজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতক পাশ করেন ২০১৬ সালে। তিনি পড়াশোনা শেষ করে ESCO.Singapore এ চাকরি সুবাদে দেশ বিদেশ বিভিন্ন জায়গা ঘুরে প্রকৃতি নিয়ে জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি ২০১৮ সালে ভারত সরকার কর্তৃক প্রদানকৃত আইসিসিআর বৃত্তি লাভ করে ভারতের রাজস্থান রাজ্যের রাজধানী জয়পুরে "National Institute of Ayurveda (Deemed to be University)" এ Bachelor of Ayurvedic Medicine and Surgery বিষয়ে পড়াশুনা করছেন।

Pin It on Pinterest

Share This

Share This

Share this post with your friends!