আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা দর্শনঃ পর্ব ৪
“সামান্য – বিশেষ সিদ্ধান্ত“
যে দ্রব্যের যে গুণ অধিক থাকে সে দ্রব্য গ্রহণে সেই গুণ শরীরে ও বৃদ্ধি পায়।
এইটা ই সামান্য বিশেষ সিদ্ধান্ত। যেমন: ডিম খেলে শুক্রানু বৃদ্ধি পায়। ভাল পরিবেশে ভাল মানুষের গুন বৃদ্ধি পায়, হিংস্র প্রানী খেলে মানুষের হিংস্রতা বৃদ্ধি পায়।
সামান্য-বিশেষ বুঝতে হলে প্রাণশক্তি বুঝা খুব জরুরি। যেমন আমরা যখন সমুদ্রতীরে বেড়াতে যাই মন আনন্দে ভরে ঊঠে, আবার একই আমরা যখন ঢাকার বিষাক্ত বাতাস নেই মানসিকভাবে খুব চাপ অনুভব করি। এর কারণ প্রকৃতির প্রতিটা জিনিসের নিজস্ব প্রাণ শক্তি আছে। সমুদ্র তীরের বিশুদ্ধ বাতাসের প্রাণ শক্তি বেশি বলেই সেখানে আনন্দ অনুভব করি।
এই প্রাণ শক্তি হলো স্রষ্টা প্রদত্ত বুদ্ধিমত্তা। এই প্রাণ শক্তি আমরা যখন প্রকৃতি থেকে গ্রহণ করি তা আমাদের মধ্যে সঞ্চারিত হয়। যার মধ্যে প্রাণ শক্তি যত বেশি সে মানুষ ততবেশি শারীরিক, মানসিক ও আত্মিকভাবে সুস্থ। ভাল কাজ প্রাণ শক্তি বাড়ায়, পরোপকার প্রাণ শক্তি বাড়ায়, শুদ্ধ বাতাস প্রাণ শক্তি বাড়ায়, একটা ভাল বই প্রাণ শক্তি বাড়ায়। একটা ব্যলেন্স খাদ্য প্রাণ শক্তি বাড়ায়।
সুতরাং প্রকৃতিতে প্রাণ শক্তি দুইভাবে বিরাজ করছে, একটা ঐশ্বরিকভাবে (pure) যা আপনাকে আনন্দের জগতে ডুবিয়ে দিবে। আরেকটা আসুরিকভাবে (distorted) আপনাকে দুঃশ্চিতার জগতে ডুবিয়ে দিবে।
আধুনিক মেডিসিন সিন্থেটিক। এটিতে কোন ক্যামিক্যাল প্রকৃতি থেকে আলাদা করা হয় তারপর প্রাকৃতিকভাবে বানানো হয়। এই মেডিসিন এ প্রাণ শক্তি সর্বদা ভারসাম্যহীন অবস্থায় থাকে।
ভারসাম্যহীন ঔষধ ই শরীরে ভারসাম্য তৈরি করে, ভারসাম্যযুক্ত ঔষধ ই শরীরে ভারসাম্য রক্ষা করে। আয়ুর্বেদ এ মেডিসিন তৈরিতে কোন জিনিস এর সম্পুর্ন অংশ ব্যবহার করা হয়। একটা ভিটামিন সি আর লেবুর ভারসাম্য কখনো এক না। তাই প্রকৃতি চিকিৎসা চিন্তনে ও অনেক অগ্রবর্তী।
লেখক সম্পর্কেঃ
দেবজ্যোতি দত্ত, ব্যাচেলর অফ আয়ুর্বেদিক মেডিসিন এন্ড সার্জারী ছাত্র , রাষ্ট্রীয় আয়ুর্বেদিক সংস্থান, জয়পুর, রাজস্থান।