Select Page

আমলকী এর পুষ্টি ও ঔষধি গুণাগুণ!

আমলকী এর পুষ্টি ও ঔষধি গুণাগুণ!

আমলকী (Emblica officinalis)

আমলকী পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল। আমলকী Vitamin-C, Citric Acid, Amino acid, Tannin, Polyphenolic compounds, phosphatides এর উৎস। আমলকী বিভিন্ন কোলাজেন সংশ্লেষন বিক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।

এতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি রয়েছে। যা অন্যান্য ফলের তুলনায় অনেক অনেক বেশি। বিভিন্ন অসুখ সারানো ছাড়াও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে আমলকীর ভূমিকা অসাধারণ। চলুন তাহালে এবার জেনে নেই আমলকীর বিভিন্ন পুষ্টি ও ঔষধি গুণাগুণ।

  •  আয়ুর্বেদিক মতে আমলকীতে পাঁচটি রস বিদ্যমান অম্ল, কষায়, কটু, তিত্ত,ও মধুর স্বাদ এবং বিপাকে (metabolism) মধুর হয়। যা শরীরের তাপকে প্রশান্ত করে,এবং শরীরের স্নিগ্ধতা, ত্বকের লাবণ্যতা ও শ্রী বৃদ্ধি করে। আমলকীতে অম্লরস থাকায় বায়ু, মধুর ও শৈত্যেগুন থাকায় শরীরে শীতলতা প্রদান করে ও রুক্ষতা কমায়। এবং কষায় রস থাকায় কফ কমায়।আমলকী অত্যন্ত বলকারক ও রসায়ন।

আয়ুর্বেদিক মতে আমলকীর বিভিন্ন ব্যবহার ও উপকারিতা :

  • অম্লপিত্ত(Acidity) পিত্ত বিকৃত রোগে: অম্লপিত্ত(Acidity) পিত্ত বিকৃত রোগে আমলকী অমৃততুল্য কাজ করে। শুকনা আমলকী গরম পানিতে ভিজিয়ে (ফান্ট করে) পান করলে অম্লপিত্ত(acidity) উপশম হয়। পিত্তশুলে (বুক জ্বালাতে) পরিপক্ব কাচা আমলকীর রস+চিনি সহ খেলে দারুন উপকার মিলে।

 

  • পরিণাম শুল (পেপটিক আলসারে): আলসার নামটির সাথে কমবেশি সবায় পরিচিত। পেপটিক আলসার বা পরিণাম শুলে আমলকী অত্যন্ত ফলদায়ক। আমলকী চুর্ণ + যষ্টিমধু চুর্ণ + লৌহভষ্ম সমান মাত্রায় একত্রে মিশিয়ে ৫০০ মিলি গ্রাম করে পানি সহ খেলে পেপটিক আলসার উপশম হয়।

 

  • অরুচি /ক্ষুধামন্দা (Dyspepsia) : আমলকী পাচন ক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। কিছুদিন ১০-২০ মিলি আমলকীর কাচা রস অথবা আমলকীর চুর্ণ ৩-৬ গ্রাম সেবন করলে ক্ষুধামন্দা অরুচি দূর হয়।

 

  • অক্সিডেটিভ স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করে: অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হলো দেহে যখন ফ্রি র‍্যাডিক্যালস এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলির মধ্যে ভারসাম্য থাকেনা তখন কোষের ক্ষতি হতে থাকে। যার ফলে খুব তারাতাড়ি বয়স বাড়িয়ে তোলে, হৃদরোগ , উচ্চ রক্তচাপ, ডাইবেটিস, এবং কান্সার এর ঝুকি বাড়ায়। এক্ষেত্রে আমলকী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। অকাল বার্ধক্য, খালিত্য (মাথায় টাক), পালিত্য(অকালে চুল পাকা) রোধ করে শরীরে রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

 

  • মুত্ররোধে /মুত্রকৃচ্ছতায়(Retention of urine) : প্রসাবের প্রতিবন্ধকতা বা মুত্রকৃচ্ছতায় আমলকী বেটে নাভীর নিচে প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়।এছাড়াও মেয়েদের যোনীদাহ বা প্রসাব কালীন সময়ে জ্বালাযন্ত্রণায় আমলকীর রস চিনি সহ পান করলে উপশম হয়।

 

  • চোখ উঠায় ড্রপার হিসাবে আমলকীর ব্যবহার: বর্তমান সময়ে চোখ উঠার প্রবণতা বেড়েই চলেছে, এক্ষেত্রে মিলতে পারে আয়ুর্বেদিক সমাধান। চোখ উঠা, চোখের রক্তবর্ণতা ও চোখের যন্ত্রনায় পরিপক্ক আমলকীর রস ফোঁটা ফোঁটা ড্রপের মত চোখে প্রয়োগ করলে চোখ উঠা আরগ্য হয়। (সুত্রঃ বঙ্গসেন)

 

  • রক্ত স্বল্পতায় (Anemia) : যকৃতের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি ও রক্তস্বল্পতায় আমলকীর গুণ অতুলনীয়। আমলকী চুর্ণ +শোধিত লৌহভষ্ম একত্রে সেবন করলে পান্ডু বা রক্তস্বল্পতা দূর হয়।

 

  • কোষ্ঠকাঠিন্য (constipation) : কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে আমলকীর সাথে সামান্য তেউড়ী মূল চুর্ণ সহ সেবন করিলে কোষ্ঠকাঠিন্য আরগ্য হয়।

 

  • রক্তপিত্ত রোগে (Hematemesis): নাক দিয়ে রক্ত পড়ায় আমলকী ঘি তে ভেজে কাঁজির পানিতে বেটে মাথায় প্রলেপ দিলে রক্তপিত্ত প্রশমিত হয়।

 

  • দাঁতের মাড়ির স্কার্ভি রোগে: স্কার্ভি দাঁতের মাড়ির খুব পরিচিত একটি রোগ। সাধারণত ভিটামিন-সি এর অভাবে স্কার্ভি রোগ দেখা দেয়,দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে, মাড়িতে ঘা হয়। এক্ষেত্রে আমলকী স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধে শক্তিশালী ভুমিকা পালন করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমান ভিটামিন-সি যা নিয়মিত খেলে স্কার্ভি রোগ উপশম হয় এবং শরীরে ভিটামিন-সি অভাব পুরুণ হয়।

 

  • সর্দি কাশিতে(cold cough): আয়ুর্বেদিক মতে কষায় রস সেবনে কফ প্রশমিত হয়। আমলকীতে সেহেতু কষায় রস বিদ্যমান থাকায় সর্দিকাশি উপশম হয়। আমলকী চুর্ণ দুধ সহ পাক করে ঘৃত সহ লেহন(চেটে খেলে) করিলে কাশি ক্ষয়রোগ আরগ্য হয়।

 

  • শ্বেতপ্রদর (Leucorrhoea): মেয়েদের শ্বেতপ্রদরে আমলকী অমৃততুল্য। আমলকীর বীজচুর্ণ +চিনি ও মধু সহ খেলে শ্বেতপ্রদর নিরাময় হয়।

 

  • মাথা ব্যাথা এবং চুলপড়া ও খুস্কি নিরাময়ে: আমলকী +চিনি+গব্যঘৃত একত্রে বেটে মাথায় লাগালে মাথা ব্যাথা,চুলপড়া, খুস্কি নিরাময় হয়। অথবা শুধু আমলকীর রস মাথায় দিলে মাথা ঠান্ডা থাকে, চুলের গোড়া শক্তিশালী ও সিল্কি হয়।

 

  • বৃষ্য/যৌনদুর্বলতা দূর হয়: আমলকী ত্রিদোষ নাশক সুতরাং শরীরে সপ্তধাতু কে ব্যালেন্স কন্ডিশনে রাখতে সহয়তা করে। আমলকী মধুর রস ও বিপাকেও(metabolism) মধুর হয়। আর মধুর রস অত্যন্ত ধাতুবর্ধক, প্রীতি জনক, বলকারক, বৃষ্য, ইন্দ্রিয় শক্তি বৃদ্ধি করে এবং পুষ্টিজনক। সুতরাং আমলকী একদিকে যেমন রসায়ন অন্যদিকে বাজিকরণ বটে।

 

এছাড়াও আমলকী থেকে তৈরী বিভিন্ন যৌগিক ঔষধ (Compound Medicine) রয়েছে যা রোগীর অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসক পরামর্শ দেন। যেমনঃ আমলকী রসায়ন, ধাত্রীরসায়ন, ধাত্রীলৌহ বটি, আমলকী খন্ড, চ্যবনপ্রাশ, আমলকী অবলেহ প্রভূতি।

About The Author

Md. Imran Hossain

লেখকের জন্ম ১৯৯৯ সালের ৩০ মে বাংলাদেশের বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ জন্মগ্রহন করেন। তিনি শিক্ষাজীবনে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক আলিয়ার হাট সিনিয়র ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসা থেকে সম্মানের সাথে উত্তীর্ণ হোন। পরবর্তীতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর অধীনে, বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে (স্নাতক) ইসলামীক স্টাডিজ চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত আছেন। ২০১৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শেষে স্নাতক পড়ার পাশাপাশি Tmss Feroza Begum Ayurvedic and Unani Medical College and hospital Bogura, থেকে ৪বছর মেয়াদি Diploma in Ayurvedic Medicine and Surgery (DAMS) বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন।।

Pin It on Pinterest

Share This

Share This

Share this post with your friends!