Bronchial Asthma কি? কারণ, সমস্যা ও আয়ুর্বেদিক স্ব-সহায়ক নির্দেশিকা!
Asthma: বা হাঁপানি একটি শ্বাসকষ্ট সংবলিত রোগ। কার্যতঃ এটি শ্বাসনালীর অসুখ। এর ইংরেজি নাম অ্যাজমা যা এসেছে গ্রিক শব্দ Asthma থেকে। অ্যাজমা হচ্ছে শ্বাসনালীর দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত একটি রোগ, যেই রোগে শ্বাসনালী যে কোনো এলার্জেন জাতীয় বস্তুর প্রতি অতিমাত্রায় সংবেদনশীলতা দেখায় এবং প্রদাহের কারণে শ্বাসনালীর ভিতরের মিউকাস মেমব্রেন ফুলে যায়, এতে করে শ্বাসনালীর টিউব টা সরু হয়ে যায় । আয়ুর্বেদে এজমাকে বলে “তামাকশ্বাস”।
এজমা অ্যাটাক এর সময় কখনোই শুয়ে থাকা উচিৎ না । বসে অথবা বসে বেঁকে থাকা অবস্থায় সকল চিকিৎসা করা উচিৎ।
হাঁপানি রোগ (এজমা) এর উপসর্গঃ
ফুসফুসের বায়ু চলাচলের নালীগুলির সংকীর্ণতার কারণে প্রধানত হাঁপানির লক্ষণগুলি দেখা যায়।
১) এজমা সমস্যা শুরু হওয়ার আগে হজম জনিত সমস্যা দেখা দেয়। যেমন বদহজম কোষ্ঠকাঠিন্য, অথবা ডায়ারিয়া জনিত সমস্যা দেখা দেয়।
২) ঊর্ধ্বশ্বাস অথবা নিঃশ্বাসের দুর্বলতা হাঁপানির রোগীদের সাধারণত: নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা হয়, দম বন্ধ লাগে অথবা শ্বাস নিতে ছটফটানি হয়। এগুলি বিশেষ ভাবে হয় যখন হাঁপানি বাড়ে । বিশেষ করে রাতে এই সমস্যা বেশি হয়।
৩ )বুকের ভিতর শোঁ শোঁ আওয়াজ সরু শ্বাস নালীর ভিতর দিয়ে বায়ু চলাচল করার সময় বাঁধার কারণে বুকের ভিতরে উচ্চ ও তীক্ষ্ণ স্বরবিশিষ্ট শব্দ হয় । যখন হাঁপানি কম থাকে তখন সাধারণত শ্বাস ত্যাগ করার সময় এই আওয়াজ হয়। যখন হাঁপানি গুরুতর রূপ ধারণ করে তখন শ্বাস নেওয়ার সময়ও এই শব্দ হয়। যখন হাঁপানি অতি তীব্র আকার ধারণ করে তখন সরু শ্বাস নালী দিয়ে চলাচল করার সময় বাতাস এত বাধা প্রাপ্ত হয় যে তখন এই শব্দ সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত থাকে।
৪ ) এই রকমের শোঁ শোঁ শব্দ অন্য রোগেও পাওয়া যায়, যেমন সিস্টিক ফাইব্রোসিস, হার্ট ফেলিয়োর এবং স্বরতন্ত্রীয় ত্রুটি । তাই বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে হাঁপানি সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া জরুরী।
৫ ) হাঁপানির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ হচ্ছে কাশি বিশেষত অতিরিক্ত ব্যায়াম-জনিত কারণে হয়, এবং রাত্রিকালীন হাঁপানির ক্ষেত্রে বেশি এটা শুষ্ক এবং অ-উৎপাদনশীল কাশি হয়।
৬ ) অনেক সময় হাঁপানির মাত্র একটি লক্ষ্মণ দেখা যায় যেমন দম বন্ধ হয়ে আসা অথবা বুকে ব্যথা হওয়া । এই লক্ষণ ও রাত্রিকালীন হাঁপানি এবং ব্যায়াম করার পর হাঁপানিতে দেখা যায়।
৭ ) তাছাড়া ঠান্ডা বাতাসে স্বাস কষ্ট হয়। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে খারাপ স্বাস্থ্য হয়। এবং অনুশীলন করার সময় শ্বাসকষ্ট হওয়া।
এজমা রোগের কারণঃ
১) যেকোন কিছুর প্রতি এলাজির সমস্যা এজমার অন্যতম কারণ । ফুলের রেণু, ধুলাবালি, দূষিত বায়ু, পালক ধূমপানের ধোঁয়া এজমার trigger factor হিসাবে কাজ করে।
২) Allopathic drugs যেমন beta-antagonists, aspirin, NSAIDS মেডিসিন যেকোন সময় এজমার trigger factor হিসাবে কাজ করতে পারে।
৩) respiratory viral infection, emotional stress এইসব ও এজমা সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ।
৪) পরিবারের কারো এজমা থাকলে ,জিনগত ত্রুটির কারণে এজমা রোগের সমস্যা হতে পারে।
৫) অনিয়মে ও শীত ঋতুতে বৃদ্ধদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
সাধারণ রোগ নির্ণয়ঃ
- X-ray or computerized tomography (CT) imaging of your chest
- CT scans of your sinuses
- Blood tests এ ক্ষেত্রে (ইওসোনোফিল,বৃদ্ধি পাবে, লিউকোসাইট বেশী হলে জীবাণুর সংক্রমণ বুঝায়।)
- Gastroesophageal reflux assessment
- Examination of the phlegm in your lungs (sputum induction and examination) for signs of a viral or bacterial infection
পথ্যাপথ্যঃ (কি খাওয়া যাবে , কি করা যাবে – কি যাবে না )
নিয়মিত ও পরিমিত মাত্রায় উষ্ণ পানি পান এজমা সমস্যার ক্ষেত্রে বেশ উপকারি। কফবায়ু নাশক ও কোষ্ঠশুদ্ধিকারক খাদ্য-পানীয় উত্তম। পুরাতন চালের ভাত, পটোল, কচিমুলা, তেলাকুচার শাক, বেতোশাক, রসুন,আদা, ছাগলের দুগ্ধ ও ঘৃত,দেশি মোরগ ইত্যাদি।
ঠাণ্ডায় ভ্রমণ,ভারবহন, ধূলি ও ধূম সেবন, অতিরিক্ত মৈথুন, তৈলাক্ত খাবার,মাষকলাই, দই, দুধ, কলা, পেয়ারা , ঠাণ্ডা খাবার, আলু,এবং কফবর্দ্ধক আহার , পিচ্ছিল জাতীয় -বিহার অপথ্য।
এজমা বা হাঁপানি রোগের মাত্রাঃ (২ বছরের উপর থেকে প্রাপ্ত ব্য়স্কদের জন্য )
- রোগের মাত্রার উপর নির্ভর করে এজমাকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়
১) মৃদু থেকে মধ্যম মাত্রা (mild to moderate),
২) মারাক্তক (severe),
৩) জীবন-নাশকারী (life threatening)
১. মৃদু থেকে মধ্যম মাত্রা (mild to moderate)
কথা: কথা সঠিকভাবে বলতে পারবে।
RR (Respiratory Rate): Children 2-5 years <40/min ,Children >5 years < 30/min
Heart Rate: Children 2-5 years <140/min , Children > 5 years < 125/min
২. মারাক্তক (severe)
কথা: সম্পূর্ণ বাক্য শেষ করতে পারবে না, আটকে যাবে
RR (Respiratory Rate): Children 2-5 years > 40/min Children >5 years > 30/min Adults >25/min
Heart Rate : Children 2-5 years > 140/min Children >5 years > 125/min Adults >110 minute
Oxygen Saturation: 92% এর কাছাকাছি থাকবে।
৩. জীবন-নাশকারী (life threatening)
কথা: চেতনাহীন হয়ে যাবে। ঝিমাবে, জট পাকানাে কথা বলবে, অথবা কোমায় চলে যাবে৷
RR (Respiratory Rate): Exhaustion (ক্লান্তি), Silent chest (শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া), Paradoxical thoracoabdominal movement (অসমান্তরাল শ্বাস – প্রশ্বাস), Cyanosis (জিহ্বা নীল। বর্ণ হয়ে যাওয়া)
Heart Rate: Bradycardia (slow heart rate) in children or arrhythmia/hypotension in adults
Oxygen Saturation: 92% এর নিচে নেমে যাবে।
এজমা সমস্যায় তাৎক্ষনিক চিকিৎসাঃ
যেহেতু এজমা একটি শ্বাসজনিত প্রাণনাশক ব্যাধি হতে পারে তাই তাৎক্ষনিক চিকিৎসায় কি করনীয় সে বিষয়ে একটু প্রাথমিক ধারনা থাকতে হবে।
১) Bronchospasm বা bronchial tube সঙ্কোচনে salbutamol (albuterol) বহুল ব্যবহৃত quick acting , lifesaving, medicine হিসাবে কাজ করে। এটি nebulizer solution অথবা inhaler এর মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়।
২) যখন salbutamol (albuterol) কাজ না করে তখন Ipratropium (Atrovent HFA) life saving medicine হিসাবে কাজ করে। এটি nebulizer solution অথবা inhaler এর মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়।
৩) টেবলেট হিসাবে Oral corticosteroids , lung inflammation এ ব্যাবহার করা যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসলে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে সেখানে চিকিৎসক breathing tube ব্যবহার করে অক্সিজেন সঞ্চালন বাড়াতে পারেন।
বিঃদ্রঃ মারাক্তক (severe), ও জীবন-নাশকারী (life threatening) অবস্থা দেখা দিলে কাল বিল্মব না কে উপরিউক্ত তাৎক্ষনিক চিকিৎসার পাশাপাশি দ্রত হাসপাতালে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
আয়ুর্বেদিক স্ব-সহায়ক নির্দেশিকা
আয়ুর্বেদ সমস্যা একটি দীর্ঘকালীন ও জটিল ব্যাধি । কিছু নিয়ম অনুসরণ করলে এই সমস্যা নিরন্ত্রনে রাখা সম্ভব তাই মেডিসিন এর পাশাপাশি নিজের লাইফ স্টাইল নিয়েও সর্বদা সচেতন থাকতে হবে ।তাই সকল কিছুই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ও চিকিৎসকের অধীন থাকলে গুরুতর ক্ষতি খেকে রক্ষা হতে পারে, কারণ রোগের কারণ উতঘাটন করাই চিকিৎসকের প্রধান কর্ম।
১) সকল বয়সে (৮ বছরের উপরে )চ্যাবন প্রাশ(পিপুল চূর্ণ সহ)সকাল সন্ধ্যা অথবা রাত্রে ঘুমানোর আগে ১চা-চামচ করে খেলে বেশ উপকার হয়।
২) ত্রিকটু চূর্ণ ১/২ চামচ + ১ চামচ মধু সহ সকাল ও সন্ধ্যা ১ চা-চামচ করে খেলে বেশ উপকার হয়।
৩) গোসলের ১ ঘণ্টা আগে সরিষার তেল মালিশ (রসুন+কালজিরা+ সৈন্ধব লবণযুক্ত) মালিশ + শীতকালে রাতে ঘুমানোর আগে এই তেল মালিশ বেশ উপকারক।
তাছাড়া অন্যান্য আয়ুর্বেদিক মেডিসিন যেমন ১) মহালক্ষী বিলাস(পান+আাদার রস +মধুসহ) ২)বৃহৎ স্বারচন্দনাদি তেল বুকে পিঠে মালিশ করতে ২/৩ বার ৩)ভার্গীগুড় ,বৃহৎশ্বাসচিন্তামনি, কণকাসব ইত্যাদি অনেক ঔষধ রয়েছে তবে চিকিৎসক এর পরামর্শ নিয়ে ঔষধ সেবন করা উচিত।