Common Cold’র কারণ, লক্ষণ ও আপদকালীন স্ব-সহায়িকা!
Common Cold
যখন বর্ষাকালের আগমন ঘটে তখন প্রকৃতিগত কারণে আমাদের শরীরের Immunity System দুর্বল হয়ে যায়। সেই সময় আমাদের ঠান্ডা ও ফ্লু জাতীয় রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। তাছাড়া এখন মানুষ ঘরের মধ্যেই দরজা জানালা বন্ধ করে বেশি সময় কাটাতে অভ্যস্ত, যা ধীরে ধীরে জীবানু জন্মানোর প্রজননস্থল হয়ে যায়। সাধারণত, বাচ্চারাও বিদ্যালয় থেকে ঘরে ফেরার সময় জীবানু বহন করে ঘরে নিয়ে আসে।
ঠান্ডা ও ফ্লু জাতীয় রোগে সাধারণত তীব্র মাত্রায় ভাইরাল ইনফেকশনস। ঠান্ডা সাধারণত Nasal Mucus উৎপাদন করে নাকের ছিদ্র ভরাট করে দিয়ে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস বিগ্ন ঘটায়, গলা বসে যাওয়া, হাঁচি দেওয়া, Sinuses ও Eustachian tube এর ছিদ্র গুলো বন্ধ হয়ে যায়।
লক্ষণঃ
হঠাৎ করে High fever, Severe Headache, Body pains, Exhaustion এবং বার বার শুষ্ক কফ আসা ফ্লু হওয়ার প্রবনতাকে নির্দেশ করে। এই লক্ষণগুলো রাতে ঘুমানোর সময় বেশি প্রভাব ফেলে। যার কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি দুর্বলতা অনুভব করেন।
স্ব-সহায়িকা নির্দেশিকা ও আয়ুর্বেদিক প্রতিকারের গাইডলাইন:
ইমিউনো সিস্টেমকে আরো শক্তিশালী করা ও নিজেকে সুস্থ রাখা। ঠান্ডা আবহাওয়া, চাপ, ঘুমের ঘাঁটতি, পুষ্টির অভাব এগুলো মিলে আপনার ইমিউনো সিস্টেমকে দুর্বল করে দেয় এবং ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ায়। তবে বারির আঙিনার দুটি গাছ আপনাকে সহায়তা করতে পারে আপনার ইমিউনিটি সিস্টেমকে শক্তিশালী রাখতে তা হল আমলা (আমলকি) এবং তুলসি।
১। আমলকি হচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিটন-সি এর সর্বোচ্চ যোগান দাতা। ১০০ গ্রাম আমলকিতে ১০০০ মিলিগ্রামের মতো ভিটামিন-সি পাওয়া যায়। এটা শুকনো পাউডারের ক্ষেত্রেও সেইম থাকে। সাম্প্রতিক ক্লিনিক্যাল টেষ্টে দেখা গেছে যে আমলকির মধ্যে যে ভিটামিট সি থাকে সেটা অনেক আমাদের শরীর খুব দ্রুত আত্তীকরণ (হজম) করতে পারে, কৃত্রিমভাবে প্রস্তুতকৃত ভিটামিনের চেয়। দুই অথবা তিন টেবিলচামচ ফ্রেশ আমলকির জুস অথবা অর্ধেক বা পুরো এক টেবিলচামচ গুঁড়া পানির সাথে মিশিয়ে গ্রহণ করা যেতে পারে।
২। তুলসি একদিকে শরীরে তাপ উৎপন্ন করে এবং Respiratory System এর ইনফেকশন প্রতিরোধের জন্য খুবই কার্যকর। সাম্প্রতিক সময়ে তুলসি এর Anti-Bacterial, Anti-tubercular, Anti-asthmatic and Anti-inflammatory এই Factor গুলো নিশ্চিত হওয়া গেছে। ঠান্ডা এবং ফ্লু ভাইরাসের সময় তুলশি গাছের পাতা যদি সম পরিমান শুকনা আদার গুড়ার সাথে গরম পানি মিশিয়ে চায়ের মতো খাওয়া যায় সাথে দুধ ও চিনি মিশিয়ে দিনে তিনবার খেলে ফ্লু জাতীয় ভাইরাস এবং ঠান্ডা জাতীয় সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
শুরুর ধাপে করণীয়ঃ গলা বসে গেছে এবং অতিরিক্ত Nasal Mucus উৎপন্ন হওয়ায় নাক বন্ধ হয়ে গেছে। এরকম অবস্থায় কাঁচা হলুদ ও রসুন আপনার সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। কিভাবে? আসুন দেখে নেই।
১। অনেক আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকই রসুনকে ঠান্ডা ও ফ্লু প্রতিরোধের জন্য ওষুধ হিসেবে দিয়ে থাকেন কারণ এটা শরীরের সকল ধরণের সঞ্চালন প্রক্রিয়া চালু রাখে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, হজমে সহায়তা করে ও উপরিভাগের ক্ষত নিরাময় করে। রসুনকে ন্যাচারাল আন্টিবায়োটিক বলা হয় কারণ শরীরে অপরিচিত নতুন সকল ধরণের ভাইরাসকে ধ্বংস করতে পারে। (প্রতিদিন রসুন ২-৩ কোষের বেশি নয়, রসুন ঘি য়ে ভাজা হলে রসুনের তীক্ষ্ণতা কমে)
অতিমাত্রায় গ্রহণ বর্জনীয়-
দিনে পাঁচটির বেশি কোষ খেলে ফলাফল হিসেবে বুকজ্বালা পোড়া করা, পেট ফাঁপ দেওয়া, রক্ত চলাচল ধীর গতির হয়ে জমাট বেঁধে যেতে পারে৷
সদ্য তোলা রসুনের জুস ও রসুনের তৈল Mucus Membrane এর ইনফেকশন প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী হিসেবে গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে। ৪ গ্রাম ফ্রেশ রসুনের তৈল ও ৮ মিলিগ্রাম ভোলাটাইল (উদ্বায়ী) তৈল প্রতিদিন গ্রহণ করার জন্য আদর্শ।
২। হলুদ Anti-inflammatory হলুদ অস্থিরতা কমায় ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে (যদি থাকে)। এটি ফুসফুস কফ মুক্ত রাখে এবং লিভারের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
- ভাজা হলুদের গুড়া ১/২ গ্রাম ঘি এর সাথে মিক্স করে নিলে এটা সাথে সাথেই স্বস্তি দিবে৷
- কুসুম গরম পানির সাথে কিছুটা হলুদের গুড়া মিশিয়ে দিনে দুই তিনবার কুলকুচি করলে গলা ব্যথার উপশম হয়।
বিশেষ করে যারা ধুমপান করেন তাদের যখন প্রচুর Nasal mucus নির্গত হওয়ার কারণে শ্বাসকষ্ট হয় তাদের ক্ষেত্রে পোড়া হলুদ দ্রুত স্বস্তি দেয়।
যদি আপনার ঠান্ডা লেগে জ্বর তিন/চারদিন পর্যন্ত থাকে তাহলে আপনার গলা, সাইনাস, ফুসফুস মারাত্নকভাবে আক্রান্তের সম্ভাবনা থাকে। এবং কফ জমে আপনার আপনার বুক (Chest) ভারী হয় তাহলে আপদকালীন মুক্তির জন্য এ ধরণের মিশ্রন ব্যবহার করতে পারেন।
১। Nasal Mucus (সর্দি) জমে যদি নাক বন্ধ হয়ে যায়। তাহলে সমপরিমানে দারুচিনি, গোল মরিচ, এলাচ আর কালোজিরার পাউডার করে কাপড়ে বেঁধে নাক দিয়ে শুকতে হবে।
২। সরিষার তৈল দুইবেলা দুই ফোঁটা করে নাকে দিতে হবে।
৩। গোল মরিচ, লঙ্কা ও শুকনা আদার সাথে নিলে Mucus Membrane মিউকাস মেমব্রেনের এর বড় ধরণের প্রদাহ থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। ঠান্ডা জনিত সমস্যা ও ফ্লু জাতীয় রোগের সময় শরীর তার Moisture (স্নিগ্ধতা) হারায় এবং মিউকাস মেমব্রেন পুরো হয়ে যায় যা
র ফলে শ্বাসকষ্ট হয়। পুরু মিউকাস স্তর জীবানুর বসবাসের জন্য জায়গা তৈরী করে দেয় যার ফলে আক্রান্ত হবার পরে দ্বিগুন ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
উপরের তিনটি সহ ত্রিকটু গ্রহণ করলে মিউকাস জমতে দেয় না। যার ফলে শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহের পরিমান কমতে শুরু করে। অথবা আপনি অর্ধেক চামচ পরিমান ত্রিকটু মধু্র সাথে নিতে পারেন।
৪। একগ্লাস গরম পানির মধ্যে লেবুর রস ও চিনি দিয়ে জুস বানিয়ে ঘুমানোর আগে নিলে Mucus Membrane Nasal Mucus জমাট বাঁধবে না৷ এটা ঠান্ডা ও ফ্লু জাতীয় রোগ থেকে মুক্তি দিবে।
সুস্থতার জন্য সে সব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবেঃ
১। যারা ঠান্ডা বা ফ্লু জাতীয় রোগে আক্রান্ত তাদের থেকে দূরে বজায় রাখুন।
২। বার বার হাত ধুতে থাকুন।
৩। ব্যালেন্স ডায়েট গ্রহণ করুন এবং যথেষ্ট রেস্ট নিন।
৪। গরম পানীয় গ্রহণ করুন । যদি আপনি গরম চিকেন স্যুপ পছন্দ করেন তাহলে গ্রহণ করতে পারেন। এগুলা আপনার শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
৫। বদ্ধ জায়গায় আটকে না থেকে ফ্রেশ এয়ার একটু হাঁটাহাঁটি করতে পারেন।
৬। রুমকে কৃত্রিমভাবে ওভারহিট করবেন না। আপনার শরীরকে প্রাকৃতিকভাবে তাপমাত্রা বের করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দিন।
Writer
Md. Khairul Bashar (Naeeim)
Bachelor of Ayurvedic Medicine & Surgery (BAMS) Student, National Institute of Ayurveda (Deemed to be University), Jaipur, Rajasthan.