Constipation / কোষ্ঠকাঠিন্য কি? তার কারণ ও আপদকালীন চিকিৎসা
কোষ্ঠকাঠিন্য
চিকিৎসাবিজ্ঞান এর ভাষায় – কোষ্ঠকাঠিন্য হলো নিয়মিত শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের না হওয়া। আয়ুর্বেদ এ একে আনাহা বলে। কোষ্ঠকাঠিন্যের আরেক নাম কোষ্ঠবদ্ধতা। সাধারণত মল কোলন থেকে মলদ্বার হয়ে বের হয় । এই নিয়মের কোথাও বাঁধাপ্রাপ্ত হলে সহজে মল বের হতে চায় না এবং কোষ্ঠকাঠিন্যতা দেখা দেয় ।
আয়ুর্বেদ এর মতে এটি হলো বায়ুজনিত সমস্যা। কেঊ দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম করলে, আহার -বিহারের নিয়ম সঠিকভাবে পালন না করলে অথবা যখন হজম ক্ষমতা কমে যায় ও বৃদ্ধাবস্থা আসে তখন এই রোগে আক্রান্ত হয় বেশি।
কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার কারণ:
১) বেশি সময় মলমূত্রের বেগ ধরে রাখলে।
২)মলত্যাগের সময় বা পূর্বে বদঅভ্যাস করলে, যেমন: ধূমপান করা, চা বা কফি পান করা।
৩) অতিরিক্ত বিরেচক ঔষধ , বা পিচ্ছিলকারক ঔষধ সেবন করলে।
৪) বায়ু বৃদ্ধি করে এমন খাবার খাওয়া, যেমন: ঠাণ্ডা, রুক্ষ (ভাজি-পোড়া)খাবার খেলে, অধিক কষায়-তিক্ত খাবার খেলে।
৫) বেশি সময় খালি পেতে থাকলে অথবা প্রয়োজন থেকে অল্প খাবার খেলে।
৬) অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে।
৭) ক্ষুধা না লাগলেও বার বার খেলে ।
৮) সঠিক পরিমাণ পানি নিয়মিত না খেলে। অথবা বমি,ডায়রিয়া, ডায়াবেটিস রোগের মাধ্যমে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের হলে।
৯) চিন্তা, দুঃখ, ঘুম না হওয়া থেকেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। নিজেকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখতে শারীরিক পরিশ্রম অতীব জরুরি।
১০) দিনে অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমালে কোষ্ঠকাঠিন্য অবিশ্যম্ভাবী।
১১ )এছাড়া কৃমি, জ্বর, যক্ষ্মা, অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা রোগ থেকেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
১২) খাবার সঠিকভাবে চিবিয়ে খা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ সহজে ছাড়ে না।
আয়ুর্বেদিক আপদকালীন চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য রক্ষাঃ
১) প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এক থেকে দেড় গ্লাস উষ্ণপানি পান করতে হবে ।
২) তামার পাত্রে নিয়মিত পানি পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে বিশেষ উপকার হয়।
৩) ২০ থেকে ৩০ টা কাল কিসমিস সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর সকালে পানির সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে ও তাৎক্ষনিক উপকার হয়।
৩) নিয়মিত ঘি খেতে হবে এবং ঘি দিয়ে সব্জি-তরকারি রান্না করতে হবে।
৪) রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধের সঙ্গে এক চামচ ঘি মিশিয়ে খেলে ভাল উপকার পাওয়া যায়।
৫) সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে কোনভাবেই চা খাওয়া যাবে না এবং গুরু খাবার (মাংস, পনীর দই, অধিক মশলা যুক্ত খাবার) খাওয়া যাবে না।
৫) রাতের খাবার দ্রুত খেয়ে নিতে হবে।
৬ ) পেঁপে ও আখের জুস কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ের জন্য খুবই উপকারী।
৭ ) বেশি পরিমাণে ফল ও শাক সবজি খেতে হবে।
৮) আঁশযুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে এবং সাদা চাল, সাদা লবণ খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
৯) প্রতিদিন ঘুমানোর আগে রাতে উষ্ণ পানিতে মিশিয়ে ১ চামচ ত্রিফলা চূর্ণ সেবন করলে এবং নিয়ম পালন করলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে বিশেষ নিরাময় হয়। ত্রিফলা চূর্ণ হজম না হলে চা এর মতো করে পানিতে ত্রিফলা চূর্ণ মিশিয়ে ১০ মিনিট ফুঁটিয়ে ছেঁকে খাওয়া যাবে।
১০) নিয়মিত ১-২ চামচ মধু কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে বেশ সহায়ক ।
যেহেতু কোষ্ঠকাঠিন্য একটি বদভ্যাস জনিত রোগ তাই অভ্যাস ঠিক হলেই এই রোগের পরিপূর্ণ নিরাময় সম্ভব।
Sujit Pramanik.
Bachelor of Ayurvedic Medicine and Surgery, Shri Gulabkunverba Ayurveda Mahavidyalaya. Gujarat Ayurved University, Jamnagar, Gujrat.