হতাশা (Depression) এর আয়ুর্বেদিক স্ব-সহায়িকা!
হতাশা (Depression)
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র দেওয়া নিয়মাবলী (Guidlines) অনুযায়ী, অবসন্ন মন (Fatiguid Mind), শক্তিহীনতা (Powerlessness) এবং উৎসাহহীনতা (Callus)-কে Depression এর আওতায় ফেলা হয়েছে।
Depression স্বভাবিক মন খারাপ ও অনাগ্রহ দিয়ে শুরু হয় কিন্তু সময়ের সাথে ডিপ্রেশন ভয়ংকর রোগে পরিণতি পায়।
আয়ুর্বেদ মতে রজঃ ও তমো গুণের বিকারের দ্বারা মনে যে সমস্ত বিকার জন্মে এগুলোকে মানসিক ব্যাধি বলে। Depression একটি মানসিক ব্যাধি।
Depression এর কারণঃ
১. বায়োলজিকাল প্লেজার হরমোন নামে পরিচিত ডোপামিন (Dopamine), এন্ডোরফিন (Endorphin), সেরোটোনিন (Serotonin), অক্সিটোসিন (Oxitocin) এর অভাব দেখা দেয়। এছাড়া Brain Structure, মাদক, শৈশবের কোনো ট্রমা থেকেও সৃষ্টি হতে পারে Depression এর। সবশেষে, জেনেটিক সমস্যার কারণেও হতে পারে Depression, যেমন বংশগত Depression বা মানসিক সমস্যা ।
২. সাইকোলজিক্যাল Depression হতে পারে অতিরিক্ত কাজকর্মের চাপ থেকে, এছাড়া, যদি কোনো মানুষ অতিরিক্ত চিন্তা করে অথবা নিজের অতীত, ভবিষ্যত সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা (Negetive Perception) নিয়ে চিন্তিত থাকে কিংবা কোনো কাজে বার বার ব্যর্থ হতে থাকে তার থেকেও Depression এর জন্ম হতে পারে খুব সহজেই |
- বাস্তবিক কারণ গুলোর মধ্যেঃ
১) চাকরি হারানোর ফলে বা চাকরি না পাওয়ার ফলে।
২) কাছের মানুষের চলে যাওয়ার ফলে, অবহেলা,অপমান থেকে।
৩) উদ্দেশ্য ও আনন্দহীন অনিশ্চিত জীবন যাপনের ফলে।
৪) শারীরিক অপুর্ণতা যেমন কম উচ্চতা, কালো হওয়া, মোটা হওয়া, চুল না থাকা ও গোপন শারীরিক সমস্যার কারণে, আত্মবিশ্বাস এর অভাব থেকেও ডিপ্রেশন হতে পারে।
৫) পাশাপাশি বডি শেইমিং এর শিকার হওয়াও অনেকের ক্ষেত্রে ডিপ্রেশনের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায় ।
৬) জীবন কে অতিরিক্ত কঠিন ও সিরিয়াস ভাবে নেওয়ার কারণে জীবনের আনন্দগুলো শেষ হয়ে যায় এবং এরপর যে কোনো ধরণের ব্যর্থতা নিয়ে আসে Depression। যেকোনো বয়সের মানুষ Depression এ পড়তে পারে। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে Depression এর শিকার ১৬-২৫ বছর বয়সীরা বেশি হয় এবং এর প্রভাব অনেক দিন পর্যন্ত থাকতে পারে এবং শেষ পরিনিতি অনেক ভয়ানক ও হতে পারে।
ডিপ্রেশনের লক্ষণঃ
মানসিক লক্ষণ: কোনো সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হলে বা মনঃসংযোগ করতে না পারলে বা জিনিস মনে রাখতে না পারলে এইগুলো ডিপ্রেশনের লক্ষণ হতে পারে।
শারীরিক লক্ষণ: যাদের Depression হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা বেদনা হয়‚ মাথায় ব্যথা হয় বা হজমের গণ্ডগোল হয় | আমাদের শরীরে ব্যথা বেদনা বা মাথা ব্যথা বা হজমের গণ্ডগোল অন্য কারণের জন্যেও হতে পারে | কিন্তু শরীর সম্পূর্ণ ঠিক থাকলেও যখন এমনটা হয় তখন কিন্তু তাকে ডিপ্রেশনের লক্ষণ হিসেবেই ধরা হয় |
অপরাধবোধ: যাদের সিভিয়ার ডিপ্রেশন হয় তারা কোনো কারণ ছাড়াই অপরাধবোধে ভোগেন। সব কিছুতেই নিজেকে দোষী মনে হবে। এছাড়াও সব সময় মনে হবে জীবনে আপনি কিছু করতে পারলেন না।
খিটখিট করা: আপনার অকারণে রাগ হবে‚ ভীষণ অস্থির লাগবে এবং সব সময়ই উদ্বিগ্ন থাকবেন। যাদের ডিপ্রেশন হয় তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাগ দেখিয়ে‚ বা অস্থির ব্যবহারের দ্বারা Depression প্রকাশ করে থাকেন।
- ভালো বা খারাপ- কোনোটাই না থাকা
সাদা-কালোর মাঝখানে থাকা এক ধূসর এলাকায় আটকা পড়ে থাকে তাদের মন, বর্তমান সামগ্রিক পরিস্থিতি এবং তারা নিজে। তারা কখনো সত্যি করে বলেন না যে, তারা ভালো আছে না খারাপ! হয়তো নিজেরাই খুঁজে পায় না সেই ভালো থাকা না থাকার উত্তরটি। কেউ যখন জিজ্ঞেস করে, “কেমন আছেন?”, তখন সেই প্রশ্নটির উত্তর দিতে গিয়ে যেন ভাবনায় পড়ে যায় অথবা প্রতিদিন মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বলতে হয়, “ভালো আছি” বা “আমি তো সবসময় ভালোই থাকি”। এটা যেন প্রশ্নকারীকে খানিকটা এরিয়ে যাবার জন্যই জোর করে বলা। নিজের পছন্দের কাজগুলো আর না করা।
নিজের সৃজনশীলতার সাথে সম্পর্কিত কোনো কাজ, যেমন ছবি আঁকা, ছবি তোলা, গান গাওয়া, লেখালেখি, নাচ করা ইত্যাদি সব ধীরে ধীরে কমিয়ে দেয়া এবং একসময় আর না করা Depression এর একটি মারাত্মক লক্ষণ। যে কাজগুলো একজন শুধু করার জন্য করে না, বরং আত্মতৃপ্তির জন্য করে, তা নিজেকে পথচলার শক্তি যোগায়। কিন্তু Depression এ ভোগা মানুষগুলো সেই কাজগুলো করাই একসময় থামিয়ে দেয় এবং নিজেদের মধ্যে সেগুলো করার কোনো তাগিদ অনুভব করে না। আশেপাশের মানুষজন অবাক হয়, হয়তো সে নিজেও অবাক হয়। কিন্তু তবু কোথায় কেমন যেন ছন্দপতন ঘটে যায়!
- ইচ্ছে করেই প্রচন্ড ব্যস্ত একটি জীবন বাছাই করে নেয়া
দমিয়ে রাখা অনুভূতিগুলোর সাথে এঁটে উঠতে না পারার কারণে তারা বেছে নেয় নিজেদের প্রচন্ড ব্যস্ত রাখার পথটি, যাতে নিজের জন্য নিজেরই সময় না মেলে, অনুভূতিগুলো অতল গহ্বরে যাতে আরো চাপা পড়ে যায়। পড়াশোনা, চাকরি, অতিরিক্ত কাজের চাপ- সব মিলিয়ে তারা ধীরে ধীরে নিজেকে ডুবিয়ে দেয় অন্য জগতে। একটুও অবসর সময় রাখে না, দমবন্ধ একটি জীবন, তবু প্রাণ খুলে শ্বাস নিতে চায় না কারণ তখন ব্যস্ততাই তার একমাত্র হতাশা ভুলে থাকার অবলম্বন।
- অল্পতেই রেগে যাওয়া
কারো অল্প হাসি বা আনন্দ প্রকাশেও যেন বিরক্ত লাগে তাদের। কেউ ভালো কথা বললেও আর ভালো লাগে না। একটু পরপর রাগ হয়। সুখ-দুঃখের অনুভূতিকে চাপা দিয়ে তাদের সকল আবেগের বিকল্প হিসেবে তখন দেখা দেয় রাগ। অল্পতেই, হয়তো অকারণেই রেগে যায় আশেপাশের সবার ওপর। দূরত্ব সৃষ্টি হয় তাদের সাথে। তাৎক্ষণিক রাগের বহিঃপ্রকাশটা বেশ প্রবল হয়। কাউকে আঘাত করা বা জিনিসপত্র ভাংচুর পর্যন্তও গড়ায়। আগে যদি এই স্বভাব না থেকেও থাকে, তবুও Depression এর সময় এমনটা হতে পারে। ব্যক্তির নিজের উপরও রাগ হয়, এলোমেলো কারণ দর্শায়, নিজেই বুঝতে পারে না কী এই রাগের উৎস? উত্তর- Depression।
- ভালো বা খারাপ- কোনোটাই না থাকা
সাদা-কালোর মাঝখানে থাকা এক ধূসর এলাকায় আটকা পড়ে থাকে তাদের মন, বর্তমান সামগ্রিক পরিস্থিতি এবং তারা নিজে। তারা কখনো সত্যি করে বলেন না যে, তারা ভালো আছে না খারাপ! হয়তো নিজেরাই খুঁজে পায় না সেই ভালো থাকা না থাকার উত্তরটি। কেউ যখন জিজ্ঞেস করে, “কেমন আছেন?”, তখন সেই প্রশ্নটির উত্তর দিতে গিয়ে যেন ভাবনায় পড়ে যায় অথবা প্রতিদিন একটি মেকি প্রত্যুত্তর থাকে, “ভালো আছি” বা “আমি তো সবসময় ভালোই থাকি”। এটা যেন প্রশ্নকারীকে খানিকটা এড়িয়ে যাবার জন্যই জোর করে বলা।
অনিদ্রা মারাত্মক ভাবে হয়,,কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এমন ও হয় যে সারারাত ঘুমাতে পারেনা, কিছুক্ষণ পর পর ঘুম ভেঙে যায়। ক্ষুধামন্দা, স্বাভাবিক খাওয়ার রুচি থাকে না, অন্তর্মুখী ও এককেন্দ্রিক হয়ে পড়া।
ডিপ্রেশনে ভোগা মানুষটির জীবনে ধীরে ধীরে অন্যের জায়গা কমে যেতে শুরু করে এবং সবটুকু জুড়ে শুধু সে-ই থাকে। অন্যের ভালোলাগা, খারাপলাগা বা কোনো অনুভূতি তার কাছে তেমন কোনো দাম পায় না। একসময় নিজেও ব্যাপারটা বুঝতে পারে এবং এজন্য নিজেকে দোষী ভাবে। কিন্তু তারপরও নিজস্ব সেই গন্ডি থেকে বের হতে পারে না। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, প্রেমিক-প্রেমিকা সহ সব ধরনের ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্কে অবহেলা, কারো মতামতকে প্রাধান্য না দেয়া, নার্সিসাস কমপ্লেক্সের সূত্রপাত ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। এর ফলে সকলেই ব্যক্তিটির কাছ থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করে এবং সে পুরোপুরি একা হয়ে পড়ে। একাকিত্ব যত গ্রাস করে, ডিপ্রেশন আরো বাড়তে থাকে। একধরনের চক্রাকার প্রক্রিয়ায় ডিপ্রেশন গিলে খায় ব্যক্তিটিকে এবং তার জগতটাও ক্রমশ ছোট হয়ে আসে।
মানসিক সমাধানঃ
হযরত আলি (রাঃ) কে একবার প্রশ্ন করা হল আপনার মত সব সময় এতো প্রসন্ন থাকে কিভাবে? উনি মৃদু হেসে জবাবে বললেন কারণ আমি যখন কিছু চাই , এবং তা পাই তাতে খুশি হই কারণ এতে আমার ইচ্ছা পূরণ হল, তদ্রূপ আমি যখন কিছু চাই এবং তা না পাই তাতে আরো বেশি খুশি হই কারণ এতে স্রস্টার ইচ্ছা পূরণ হল । এইটাই হল সর্বাবস্থায় খুশি থাকার মূল ভিত্তি।
ডিপ্রেশনের সময় প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা, নিজেকে নিয়ে ভাবা , নিজের ভুল ত্রুটি খুঁজে বের করা ও সেইটা নিয়ে কাজ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা খুব জরুরি। আকাশ দেখা, সবুজ ঘাসে হাঁটা, নিয়মিত প্রার্থনা করা, যোগ ব্যায়াম ও প্রাণায়াম করা সব ই ডিপ্রেশনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ।
তাছাড়া কেঊ যদি নিদ্রা জনিত সমস্যায় ভোগেন তাহলে INSOMANIA চিকিৎসা দেখে নিতে পারেন ।