(Hypertension/উচ্চ রক্তচাপ) কি? কারণ, সমস্যা ও আয়ুর্বেদিক প্রতিকার!
Hypertension যা উচ্চ রক্তচাপ নামেও পরিচিত। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে হৃদয়ের ধমনীতে রক্ত স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গতিতে প্রবাহিত হয়।
–স্বাভাবিক অবস্থায় হার্ট ৬০-৭০ বার পাম্প করে। হার্ট যখন সংকুচিত হয় তখন প্রেশার বেশি থাকে, একে ‘সিস্টোলিক চাপ’ বলে।আবার হার্ট যখন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে তখন প্রেশার কমে যায়,একে ‘ডায়াসটোলিক চাপ’ বলে।
Hypertension এর কারণঃ
বেশির ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কারণ অজানা, তবে কিছু কারণ আছে যা রক্তচাপকে বাড়িয়ে দেয়, আবার কমিয়ে দেয়।
(১) যখন কেউ দৌড়ায় তার রক্তচাপ বেড়ে যায় আবার যখন কেউ ঘুমায় তার রক্তচাপ কমে যায়।
(২) অতিরিক্ত স্থূলতার কারণে একজন ব্যক্তি অনেকগুলি রোগে আক্রান্ত হতে শুরু করে । এর মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ অন্যতম।
(৩) যারা ধূমপান, মদ পান করেন তাদের মধ্যে উচ্চরক্তচাপের ঝুঁকি বেশি থাকে। এগুলো হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
(৪) খাবারে বেশি পরিমাণে লবণ ব্যবহার করলে উচ্চরক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে । এজন্য খাবারে কম পরিমাণ লবণ ব্যবহার করা উচিত।
(৫) উচ্চরক্তচাপের অন্যতম একটি কারণ হলো ‘স্ট্রেস ‘। গবেষণায় দেখা গেছে বেশি মানসিক চাপের মধ্যে থাকা ব্যক্তিদের উচ্চরক্তচাপ থাকে।
(৬) যোগব্যায়াম, ব্যায়ামের মত নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ করে না এমন ব্যক্তিদের হাইপারটেনশন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এজন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত।
(৭) এছড়াও হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে হাইপারটেনশন হতে পারে।
Hypertension জনিত বিবিধ সমস্যাঃ
হাইপারটেনশন বা উচ্চরক্তচাপের জন্য যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে টা হলো:
(১) অতিরিক্ত কোলেস্টেরল বা ফ্যাটের উপস্থিতির কারণে ধমনী বা শিরা শক্ত হয়ে যাওয়া।
(২) অতিরিক্ত কোলেস্টেরল বা ফ্যাটের উপস্থিতির কারণে যখন রক্তের গতিপথ বন্ধ হয়ে যায় তখন হৃদকোষে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় ফলশ্রুতিতে প্রচণ্ড হৃদশুল বা বেদনা ও হার্ট এ্যাটাক হতে পারে।
(৩) অরিরিক্ত রক্তচাপ হৃদয়ের আকার বাড়িয়ে দিতে পারে ।
(৪) অরিরিক্ত রক্তচাপ কিডনির উপর চাপ তৈরি করে। কিডনির যেহেতু মূল কাজ পরিস্রাবণ, এই পরিস্রাবণ প্রক্রিয়া ব্যাপকভাবে বাঁধাগ্রস্থ হয়।
(৫) ধমনি সঙ্কুচিত হওয়ার কারণে অতিরিক্ত রক্তচাপে ধমনি ছিঁড়ে যেতে পারে এবং অক্সিজেন এর অভাবে স্ট্রোক হতে পারে।
আয়ুর্বেদিক প্রতিকারঃ
১) নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে।
২) রিফাইন্ড খাবার যেমন সাদা চাল, সাদা ময়দা, সাদা চিনি, সাদা লবণ যা শরীরে দ্রুত সঞ্চিত হয় এবং কোলেস্টেরল লেভেল বাড়িয়ে দেয় সেসকল খাবার থেকে যতটা সম্ভব পরিহার করতে হবে।
(৩) পরিমিত মাত্রায় পেঁয়াজ ও রসুন ব্যবহার করলে হাইপারটেনশন এ উপকার পাওয়া যায়। এরা রক্তের চর্বি ও গ্লুকোজকে কমাতে সাহায্য করে।উচ্চরক্তচাপের জন্য কাঁচা বা রান্না করা পেয়াজ ও রসুন উভয়ই উপকারী। প্রতিদিন আধা থেকে এক চামচ পেঁয়াজের রস সমপরিমাণ পানির সাথে মিশিয়ে অথবা ৩-৪ কোয়া রসুন ঘিতে ভেজে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও রসুনের পেস্ট করে ১-৩ গ্রাম ঘোল/মাখন তোলা দুধের সঙ্গে খেতে পারেন।
৪) মেথি পানি সেবন ঊচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ভাল ঘরোয়া উপায়। এটি মূলত রক্ত পাতলা করে। ১ চামচ মেথি ৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে ছেঁকে সেই পানি খালি পেটে সেবন করলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। রক্তচাপ হঠাত করে বেড়ে গেলে মেথি পানিতে পরিমাণমতো তেঁতুল মিশিয়ে খেলে সাথে সাথে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে চলে আসে। তবে তেঁতুল একটানা তিন দিনের বেশি খেলে শারীরিক ক্ষতি হতে পারে।
(৫ )উচ্চরক্তচাপের রোগের চিকিৎসায় সর্পগন্ধা গাছের মুলের চূর্ণ সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। এছড়াও আয়ুর্বেদিক ঔষধ যেমন: চন্দ্রপ্রভা – বটি , চন্দ্রকলা – রস ব্যবহৃত হয়। উচ্চ রক্তচাপে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।