সকল প্রকার দুধের পুষ্টি গুনাগুনের আদ্যেপান্ত!
আয়ুর্বেদিক দৃষ্টিকোণ এ দুগ্ধ বর্গঃ
দুধ পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি দ্রব্য। দুধে Vitamin-D, Calcium, riboflavin, phosphorous, vitamins A & B12, Potassium, magnesium, zinc, iodine এর উৎস। দুধ মূলত Protine, Fat এবং Carbohydrate সরবারাহ করে আমাদের শরীরে।
দুধের প্রত্যেকটা উপাদানের কর্মক্ষেত্র আছে আমাদের শরীরে যেমন কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিন আমাদের শরীরের মূল শক্তির জোগানদাতা। ভিটামিন বি-১২ মস্তিস্কের কাজ করে। ক্যালসিয়াম হাঁড়ের গঠন মজবুত করে। এবং ক্যালসিয়ামের যথেষ্ট সরবারাহ থাকলে হাড়ে পেইন বা বাতের ব্যথা হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। এভাবে প্রত্যেকটা উপাদানই তার নিজের ক্ষেত্রে কাজ করে বডিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। দুধের অনেক গুণ থাকা সত্ত্বেও অনেকেই দুধ হজম করতে পারে না, কারো কারো ঠান্ডা লাগে এই কারণে সবার জন্য সব দুধ উপকারী না। আয়ুর্বেদ এ দুধের দৃষ্টিকোণ একটু ভিন্ন যা জানলে হয়তো উপরের প্রশ্নগুলার সমাধান মিলতে পারে।
আয়ুর্বেদ মতে দুধের রস সাধারণত মধুর যা শরীরের তাপকে প্রশান্ত করে এবং শরীরে স্নিগ্ধতা প্রদান করে৷
দুধের সিগ্ধ গুণ শরীরের রুক্ষতা কমায় এবং এটি টিস্যুর গ্রোথ বাড়ায়। তাছাড়া এটি শরীরে শীতলতা প্রদান করে এবং শরীরে ওজন বৃদ্ধি।
⊕ আয়ুর্বেদ এ দুধকে (৮) আটটি ভাগে ভাগ করা হয়েছেঃ
প্রত্যেকটা দুধের আলাদা কিছু গুন রয়েছে সেগুলো জন্য এদের ব্যবহারের উদ্দ্যেশ্য ভিন্ন হয়ে থাকে। আয়ুর্বেদ এ ৮ ধরণের দুধের কথা বলা আছে৷
১। গরুর দুধ
২। ছাগলের দুধ
৩। উটের দুধ
৪। ভেড়ার দুধ
৫। মহিষের দুধ
৬। ঘোড়ার দুধ
৭। মায়ের দুধ
৮। হাতির দুধ
এবার বিস্তারিত আলোচনা করা যাক….
১। গরুর দুধ
গরুর দুধ বুদ্ধিবৃত্তিক প্রক্রিয়া তরান্বিত করে এবং শরীরে শক্তি প্রদান করে। এই দুধের বিশেষ একটা বৈশিষ্ট্য হল সন্তান জন্মদানের পর অনেক নারী পর্যাপ্ত দুধ তার বাচ্চাকে সরবারাহ করতে সক্ষম হন না, সেই সব কন্ডিশনে গরুর দুধ নারীদের বুকের দুধ বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং এটা অন্যসব দুধের থেকে হালকা হবার কারণে এটি তুলনামূলক সহজে হজম হয়।
এটি যৌবন ধরে রাখতেও সাহায্য করে। দুধের শক্তিগুন বুকে লাগা চোটের জন্য উপকারী এবং দুর্বলতা প্রতিরোধে খুবই উপকারী। গরুর দুধ অতিরিক্ত তৃষ্ণা, ক্ষুধা, মিটাতে সাহায্য করে। অবসাদ, মাথাঘোরা ইত্যাদি রোগের জন্য উপকারী। তবে গরুর দুধ মৃদু বিরেচক, তাই যাদের হজম ক্ষমতা কম, যারা IBS / Irritable Bowel Syndrome এর রোগী, তাদের ক্ষেত্রে গরুর দুধ না খাওয়া ই ভাল।তাছাড়া গরুর দুধ শীতল প্রকৃতির হয় মানে শরীরে শীতলতা প্রদান করে তাই ঠান্ডার দিনে, সকালের ভাগে যখন ঠান্ডা থাকে তখন না খাওয়া ই ভাল। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যাদের বয়স দুই এর কম তাদের ক্ষেত্রে গরুর দুধ না খাওয়া ই উত্তম।
২। মহিষের দুধ
ইনসোমনিয়ার বা অনিদ্রায় মহিষের দুধ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তবে মহিষের দুধ গরুর দুধ থেকেও ভারী তাই গরুর দুধ মধ্যে যত সতর্কতা উল্লেখ করা হলো তা মহিষের দুধের ক্ষেত্রে ও প্রযোজ্য। এটি হজমে অতি দ্রুত শরীরের ওজন এবং ফ্যাট বাড়ে।
৩। ছাগলের দুধ
ছাগল সাধারণত কম পানি পান করে এবং প্রচুর পরিমানে ব্যায়াম করে কষ এবং তিক্ত রস সমৃদ্ধ গাছের পাতা খাওয়ার কারণে এই দুধ ওজন বাড়াবে না এবং যাদের হজম ক্ষমতা দুর্বল তাদের জন্য খুব সহজে হজমযোগ্য। ছাগলের দুধ সাধারণত অনেক দিন ধরে ভুগতে থাকা জ্বরের জন্য, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, যক্ষা এবং রক্তস্রাবের জন্য উপকারী হয়ে থাকে।
৪। উটের দুধঃ
উটের দুধ গুনের দিক থেকে সাধারণত একটু রুক্ষ টাইপের হয়। এই দুধেও ওজন বাড়ে না এবং স্বাদে লবনাক্ত টাইপের হয়। এটি হজমশক্তি বাড়ায়। কোষ্ঠকাঠিন্য, কৃমিরোগ,পাইলস, রোগে নিরাময়ে উটের দুধ কার্যকরী৷ উটের দুধ উষ্ণ গুন সম্পন্ন হওয়ার কারণে সহজে ঠান্ডা লাগে না। নিদ্রাছন্নভাব দূর করা, পেটব্যথা, কৃমির উপদ্রব দূর করা , ও পাইলস এর জন্য বিশেষ উপকারী।
৫। বুকের দুধঃ
বাচ্চার জন্য বুকের দুধ ই অতিউত্তম কারণ মায়ের দুধ ই বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বুকের দুধ সাধারণত চোখের সমস্যার জন্য উপকারী হয়ে থাকে। এই জন্য যারা ছোট বেলায় মায়ের দুধ পান করে তাদের জন্য এই সমস্যাগুলো সাধারণত অনেক কম হয়।
৬। ভেড়ার দুধঃ
ভেড়ার দুধ সাধারণত উষ্ণ গুন সম্পন্ন হয়। তবে হার্টের জন্য উপকারী নয় ভেড়ার দুধ। ভেড়ার দুধ সাধারণত হেঁচকি এবং শ্বাসকষ্টের উদ্রেক বাড়ায়। তাই আয়ুর্বেদ মতে এই দুধ নিকৃষ্ট।
৭। হাতির দুধঃ
হাতির দুধ সাধারণত শরীরে শক্তি যোগায়। তবে এটি দূর্লভ।
৮। ঘোড়া এবং গাধাঃ
এদের দুধ সাধারণত সহজেই হজম হয়। স্বাদের দিক থেকে টক, লবানাক্ত টাইপের হয় এবং আলস্য বাড়ায়।
⊕ দুধ থেকে তৈরী কিছু খাদ্য উপাদান যেমনঃ দধি, মাখন, ঘি এর উপকারীতা সম্পর্কে জানা থাকলে দৈনন্দিন জীবন আরো সহজ হবে। সেটা নিয়ে অন্য কোন দিন আলোচনা করা যাবে।