Select Page

(Insomnia) অনিদ্রা রোধকল্পে আয়ুর্বেদিক স্ব-সহায়ক নির্দেশিকা!

(Insomnia) অনিদ্রা রোধকল্পে আয়ুর্বেদিক স্ব-সহায়ক নির্দেশিকা!

অনিদ্রা একটি ঘুমের ব্যাধি। এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিরা সারা রাত ঘুমাতে পারে না, মাঝরাতে জেগে  উঠে, একবার ঘুম বাধাগ্রস্ত হলে আবার সহজে ঘুমাতে পারে না, ঘুম থেকে সাধারণত অন্যদের থেকে দেরিতে উঠে,  অথবা ঘুম অসম্পূর্ণ রেখেই ব্যক্তি খুব তাড়াতাড়ি জেগে উঠে।

 

অনিদ্রার লক্ষণ  (Symptoms of Insomnia)

১) রাতে ঘুমাতে সমস্যা,

২) রাতে ঘুমানোর চেষ্টা করার সময় কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা করা,

৩) একটি নির্দিষ্ট কাজে মনোনিবেশ করতে না পারা,

৪) রাত জেগে থাকা,

৫) সারাদিন তন্দ্রাচ্ছন্ন ও ক্লান্তি ভাব,

৬) স্মৃতিশক্তি হ্রাস,

৭) খিটখিটে ভাব ও বিরক্তিকর আচরণ,

৮) মানুষের সাথে সামাজিক হতে অক্ষমতা,

৯) দৈনন্দিন জীবনে ভুলের পরিমান বেড়ে যাওয়া,

১০) হতাশায় আচ্ছন্ন থাকা, তা থেকে আত্নহত্যার প্রবণতা।

 

 

অনিদ্রার প্রকারভেদঃ

বিভিন্ন ধরনের ইনসোমনিয়া বা অনিদ্রা রোগ আছে:

  • Short-term / Acute insomania: ঘুমের অসুবিধার একপ্রকার সংক্ষিপ্ত ঘটনা। সাধারণত জীবনে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনার জন্য Acute insomania হয়, যেমন যে কোন ব্যক্তির চাকরি পরিবর্তনের ধকল, খারাপ খবর পাওয়া, কিংবা ঘুরে বেড়ানো। অনেক ক্ষেত্রে কোন প্রকার চিকিৎসা ছাড়া Acute insomania ঠিক হয়ে যায়।
  • Chronic insomania: ঘুমের অসুবিধার একপ্রকার দীর্ঘকালীন নমুনা। একজন ব্যক্তির যখন ঘুম আসতে সমস্যা হচ্ছে অথবা অন্ততপক্ষে তিনমাস বা আরও বেশীদিন ধরে প্রতি সপ্তাহে তিনদিন করে না ঘুমোলে তাকে ক্রনিক হিসেবে ধরে নেওয়া হবে। এটি রোগের একটি মারাক্তক অবস্থা।

 

অবস্থার উপর ভিত্তি করে insomania কে ভিন্নভাবে নামকরণ করা যায় যেমনঃ

  • Secondary Comorbid insomania: অনিদ্রা রোগ যা অন্য কোন অবস্থার কারণে হয়। দুশ্চিন্তাগ্রস্থ , অবসাদগ্রস্থতা, বিশেষ কিছু চিকিৎসা জনিত অবস্থা, বাত অথবা পিঠে ব্যথার কারণে যদি অনিদ্রা জনিত রোগ হয়।
  • Sleep onset insomania: রাতের প্রথমদিকে ঘুমোতে অসুবিধা হওয়া।
  • Sleep maintanance insomania: ঘুমিয়ে থাকতে অক্ষম। এই রোগে যারা ভুগছেন তারা মাঝরাতে জেগে ওঠেন।

 

অনিদ্রার কারণ (Causes of Insomnia)

অনিদ্রার একটি প্রধান কারণ হলো মানসিক চাপ। একজন ব্যক্তির জীবনে এমন অনেক সমস্যা রয়েছে যা অনিদ্রার কারণ হতে পারে। অনিদ্রার কারণগুলো হলো-

১) পরিবারের অস্থিতিশীলতা,

৩) প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোক, ডিভোর্স, দুর্ঘটনা ইত্যাদি মানসিক চাপ অনিদ্রার দিকে নিয়ে যেতে পারে,

৪) খাবার খাওয়ার পরে এবং ঘুমানোর ঠিক আগে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা ,

৫) বিছানার পরিবর্তে চেয়ারে ঘুমানো, চেয়ারের পরিবর্তে বিছানায় কাজ করা,

৬) ঘুমাতে যাওয়ার আগে উত্তেজক দৃশ্য দেখা,

৭) রক্তচাপ এবং হাঁপানির জন্য ওষুধ গ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে অনিদ্রা,

৮) কাজের সময়সূচির পরিবর্তনের কারণে অনিদ্রা,

৯) দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা অনিদ্রার কারণ হতে পারে,

১০) ব্যায়ামের অভাবে অনিদ্রাও হতে পারে,

১১) সন্ধ্যায় ঘুমানো বা ঘুমানোর ঠিক আগে অতিরিক্ত খাওয়া অনিদ্রা হতে পারে।

১২) অ্যালকোহল, ক্যাফাইন বা নিকোটিন সেবনের ফলে অনিদ্রা হতে পারে।

 

অনিদ্রায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়ে কিছু গবেষণাঃ

১) গাড়ির চালকদের মধ্যে অধিকাংশ Road accident তাদেরই হয় যারা অনিদ্রাজনিত রোগে ভোগে।

২) যারা অনিদ্রা জনিত রোগে ভোগে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কমে যায়।

৩) যারা অনিদ্রা জনিত রোগে ভোগে তাদের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়।

৪) যাদের প্রতিদিন ৬ ঘণ্টার নীচে ঘুম হয় তাদের গড় আয়ু অনেক কমে যায়।

 

অনিদ্রা রোধকল্পে স্ব-সহায়িকাঃ  

১) নিয়মিত কিছু সময় শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে।

২) মানসিক স্থিরতার জন্য মেডিটেশন, যোগ ব্যায়াম, প্রাণায়াম, সৎসঙ্গ খুব জরুরি।

৩) দিনে ঘুমানো বন্ধ করতে হবে

৪) আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে, ভালো ঘুমের জন্য হালকা হালকা গরম মহিষের দুধ খুবই কার্যকর। বিষয়টি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। দুধের মধ্যে এমাইনো অ্যাসিড ও ট্রিপটোফ্যান থাকে, যা সেরাটোনিন উৎপাদনে সাহায্য করে। সেরাটোনিন মস্তিষ্কে শীতল প্রভাব তৈরি করে, যা ভালো ঘুম এনে দেয়। এ ছাড়া দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে, যা দেহে ঘুম আনতে সাহায্য করে।

  • হালকা গরম দুধের মধ্যে একটু জায়ফল, এলাচি আর কাজু বাদামের গুঁড়ো মিশিয়ে নিলে দুধের স্বাদও বাড়ে আর ঘুমও ভালো হয়।

৫) পেটে গ্যাস বা বদহজম হলেও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। তাই রাতের খাবার বেশি ভারী না হওয়াই ভালো।

৬) বই পড়া একটি ভাল নিদ্রাকারক ঔষধ । রাতে শুয়ে শুয়ে বই পড়লে মস্তিষ্ক দ্রুত ক্লান্ত হয়ে যায় ফলে স্বভাবতই ভাল ঘুম আসে। তাছাড়া ভাল ধর্মগ্রন্থ বা মনীষীদের জীবনী আত্মাকে প্রশান্ত করে, ফলে অনিদ্রা জনিত সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি মেলে।

৭) গোসল ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঘুমের জন্য অতি উত্তম, রাতে ঘুমানোর আগে ঊষ্ণ গরম পানিতে গোসল করে নিলে একটা পরিচ্ছন্ন ঘুম আসে এইটা আয়ুর্বেদ আচার্য চরক এর মত ।

৮) শরীরে নিয়মিত ১০-১৫ মিনিট সূর্যের আলো লাগানো অত্যান্ত জরুরি। কারণ ভিটামিন ডি এর অভাবে অনেকেই অনিদ্রাজনিত রোগে ভোগে।

 

আয়ুর্বেদিক ভেষজঃ

কাজু বাদাম: কাজু বাদামের অনেক গুণ। এটি মস্তিষ্কের শক্তি বাড়ায়, এমনকি ভালো ঘুম এনে দিতে পারে। দুধের মতোই এতে ট্রিপটোফ্যান থাকে, যা মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর উত্তেজনা প্রশমিত করে। অন্যদিকে, এতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম হৃৎস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে রাখে। প্রতিদিন একমুঠো কাজু বাদাম খেলে ভালো ঘুম হবে।

টাগরা, জটামাংসী, ব্রাম্মীর পাতার রস, সর্পগন্ধা, অশ্বগন্ধার মূলচূর্ণ দুধ ও চিনি সহ অনিদ্রায় বেশ ভাল উপকার। তাছাড়া আয়ুর্বেদ এ আরো আছে ১) ব্রাহ্মী রসায়ন ২)অশ্বগন্ধারিষ্ট ৩)নিদ্রাকর বটি ৪)নিদ্রাকর তৈল যা মাথায় ও শরীরে দৈনিক ৩/৪বার মালিশ করতে হবে। তবে ডোজ বা মাত্রা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে।

 

SIRAJUM MUNIRA

Diploma in Ayurvedic Medicine and Surgery

TMSS Feroza Begum Unani and Ayurvedic Medical College and Hospital

About The Author

Sirajum monira

লেখিকার জন্ম ২০০০ সালের ২ জানুয়ারি বাংলাদেশের বগুড়া জেলার ধুনট অফিসার পাড়া জন্মগ্রহন করেন । তিনি শিক্ষাজীবনে মাধ্যমিক ধুনট এন ইউ পাইলট হাই স্কুল থেকে,এবং উচ্চ মাধ্যমিক ধুনট ডিগ্রি কলেজ থেকে ইন্টারমিডেট পাশ করেন। ২০১৬ সালে মাধ্যমিক শেষে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার পাশাপাশি Tmss Feroza Begum Unani and Ayurvedic Medical College and Hospital,, ৪বছর মেয়াদি DAMS ডিপ্লোমা কোর্স করেন (Diploma in Ayurvedic Medicine and Surgery).

Pin It on Pinterest

Share This

Share This

Share this post with your friends!