Sinusitis এর আয়ুর্বেদিক স্ব-সহায়ক নির্দেশিকা!
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার পর পরই কাশি ও সাথে সাথে হাঁচি আসে প্রচুর! আপনি প্রচুর দুর্বল অনুভব করেন এবং পুরো শরীরে ব্যথা থাকে। আপনি এসব দেখে সন্দেহ করছেন আপনার Common Cold হয়েছে। আপনি Common Cold’র চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধই খেলেন। কিন্তু ওষুধ কোন কাজ করলো না এবং এখন এগুলোর সাথে প্রচন্ড মাথা ব্যথা যুক্ত হয়েছে।
শেষে আপনি একজন ডাক্তারের কাছে গেলেন এবং ডাক্তার আপনার পূর্বের সকল ইতিহাস, বর্তমান লক্ষণগুলো, রিপোর্টগুলো সাথে আপনার মুখমন্ডল, কপাল ও সাইনাসের এক্সরে রিপোর্ট দেখে বল্লেন আপনি সাইনাসের প্রবলেমে ভুগছেন।
প্রত্যেক সাইনাসের একটি করে মুখ থাকে যা নাকের সাথে সংযুক্ত কোন বাঁধা ছাড়া বায়ু এবং মিউকাস আদান প্রদানের জন্য৷ নাকের উপর যেকোন ধরণের ফোলা, ইনফেকশন এবং এলার্জির প্রতিক্রিয়া সাইনাসকে আক্রান্ত করে। সাইনাসে আটকে পড়া বায়ু সাথে পুঁজ, অন্যান্য মিউকাস সিক্রেশনের কারণে যে চাপের সৃষ্টি হয় সেটা সাইনাসের ওয়ালে ব্যথার সৃষ্টি করে।
সিম্পটমসঃ
সহজ ভাষায় সাইনুসাইটিসের অর্থ হলো সাইনাসে জ্বালা পোড়া। এটার নিজস্ব Localized Pain সিগন্যাল আছে, তবে সেটা নির্ভর করে কোন নির্দিষ্ট সাইনাস আক্রান্ত তার উপর।
১। মাথা যন্ত্রণার পুনরাবৃত্তি
২। রক্তজমাট বাঁধা মাথার পজিশন পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তন হওয়া। তবে বিছানা থেকে উঠার পর পর এই লক্ষণগুলো থাকে না এটাই মূলত সাইনাস ইনভলমেন্ট এর লক্ষণ।
৩। নাক মিউকাস দ্বারা ভরা থাকবে। কোন জিনিসের গন্ধ নাকে পৌঁছাবে না সাথে সাথে হলুদাভ সবুজ নাসাল মিউকাস নিঃস্বরণ হবে।
৪। এই সময়ে শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। উপরের চোয়ালে ব্যথা ও ফেইসের উপরে সাইনাস বরাবর স্পর্শ করলে ব্যথা অনুভব হবে।
৫। জ্বর যদি থাকে, তাহলে সেটা প্রাকৃতিকভাবে রোগের তীব্রতা নির্দেশ করে।
কারণসমূহঃ
১। সাইনুসাইটিসের কারণ হতে পারে ইনফেকশন, এলার্জি অথবা ওষুধ এর কারণে। এটা ঘটার অন্যতম আরেকটা কারণ হচ্ছে তাপমাত্রার পরিবর্তন। এয়ার প্রেশার ও অস্বস্তিকর বায়ুর জন্য।
২। ঠান্ডা আবহাওয়া আপনার সাইনুসাইটিসকে ঝুঁকিতে ফেলে দিতে পারে।
৩। নাকের স্প্রে (যেগুলা সাধারণ রক্তজমাট অবস্থা থেকে স্বস্তি প্রদান করে) এর অতিরিক্ত ব্যবহার করা। ধূমপান, সাঁতার কাটা, এবং ডাইভিং মত কাজ গুলো আপনার সাইনুসাইটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিবে।
৪। পলিপাস এবং সাইনাসের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়গুলো আপনার সাইনাসের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
৫। কিছু কিছু সময়ে ফাঙ্গাল ইনফেকশন এর কারণে তীব্রভাবে সাইনুসাইটিস এর আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদিও এই জীবাশ্মগুলো প্রকৃতিতে প্রচুর পরিমানে থাকে। তারা সাধারণত ক্ষতিকর না, এবং তারা শুধু এটা নির্দেশ করে যে মানব শরীরে তাদের সহ্য করার মত ক্ষমতা আছে।
স্ব-সহায়ক নির্দেশিকাঃ
১। যদি আপনার সাইনাসের সমস্যার ক্ষেত্রে সংবেদনশীলতা থাকে, তাহলে অবশ্যই ধূমপান থেকে এবং অন্যান্য বায়ুদূষণ জনিত আবহাওয়া থেকে সম্পূর্ণভাবে দূরে থাকতে হবে। নাকে জ্বালা-পোড়ার কারণে সাইনুসাইটিসে অ্যালার্জির মতো সমস্যা দেখা দেয়। মদ পান করলে সেটা Nasal-Sinus Membrane ফুঁলে উঠবে। আপনার সাইনুসাইটিসে সংবেদনশীলতা থাকলে অবশ্যই এসব জিনিস পরিহার করতে হবে।
২। সাইনুসাইটিসের প্রবলেম থাকলে আকাশে পথে ভ্রমণ করা বর্জনীয়।
৩। আপনি যদি সন্দেহ করেন যে সাইনাসের জ্বালা-পোড়া দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে ধুলা-বালি অথবা খাবার বা এলার্জির কারণে সেটা আপনার Respiratory Reaction এর কারণ হবে যেরকম বন্দুকের ট্রিগার টেপার সাথে সাথে গুলি বেরিয়ে যায় তত দ্রুতই Reaction দেখাবে। এক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন এবং মেডিকেল হেল্প নিন।
৪। দই, কলা, ঠান্ডাপানীয়, মাথা ভিজিয়ে বার বার গোসল এবং মশা তাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত কয়েল সাইনুসাইটিসে আক্রান্ত রোগীর জন্য অনেক বেশি বিপদজনক এসব জিনিসের অভ্যাস থাকলে পরিহার করতে হবে।
৫। হলুদ, আদা, রসুন এবং কালো মরিচ সাইনুসাইটিসের জন্য সহায়ক প্রতিরোধে এবং সাথে রোগ থেকে মুক্তি লাভের জন্য।
৬। যদিও ঘুমের ভূমিকাও অনেক বেশি, সুস্থ অনুভব করতে ঘুমের প্রয়োজনীয়তাও বেশি। তবে অতিরিক্ত ঘুম আপনার সাইনাসের জন্য খারাপ হবে। যখন আপনি বেশি সময় ধরে শুয়ে থাকেন তখন আপনার সাইনাসে রক্তজমাট বাঁধে।
- সাইনাসের সমস্যায় এক পর্যায় (ক্রোনিক পর্যায়ে) রক্ত জমাট বাঁধা সাধারণ ঘটনা। তখন আপনার সাইনাসের এক পাশ আক্রান্ত হয় সেক্ষেত্রে যে সাইটে রক্তজমাট বাঁধে নাই সেপাশে সাইট হয়ে ঘুমাবেন।
৭। যাদের সাইনুসাইটিস ক্রোনিক (বহু দিন ধরে আক্রান্ত) পর্যায়ে চলে গেছে তাদের ক্ষেত্রে নিয়মিত ব্যায়াম রক্তজমাট কমাতে সাহায্য করে নাসাল নির্গমনের মাধ্যমে।
- যাদের রোগ ক্রোনিক পর্যায়ে যায় নি তাদের ক্ষেত্রে ব্যায়াম উপসর্গ আরো খারাপ করে দিবে।
৮। চোখে চশমা পড়ার ক্ষেত্রে খেয়ার রাখতে হবে যাতে সেটা ভালো করে ফিট হয়। যদি আপনার চশমা দ্বারা আপনার নাসাল ব্রীজে খোঁচা লাগে। আপনার রোগের উপসর্গ আরো খারাপের দিকে চলে যাবে।
৯। পানি গরম করে সেই গরম পানির বাষ্প রক্তজমাট ভেঙ্গে স্বাভাবিক করতে অনেক সহায়ক ভূমিকা পালন করে। গরম পানির সাথে ইউক্যালিপ্টাস গাছ বা পুদিনাসহ শ্বাসের সাথে নিতে পারেন। সাধারণভাবে কোন কাপে গরম পানি নিয়ে সেটার বাষ্পও যদি শ্বাসের সাথে নেওয়া হয় সেটাও কাজ করবে।
১০। কুসুম গরম পানির সাথে এক টেবিল চামচ লবন মিশিয়ে সেই পানি দিয়ে হালকা করে নাকের যে অংশে সাইনাস থাকে ঐ অংশ ধৌত করলে শুষ্ক নাসাল মেমব্রেনকে সিগ্ধ করতে সাহায্য করে। মিউকাস ভিজিয়ে ফেলে যা উঠিয়ে ফেলার জন্য সহজ হয়ে যায়। ধৌত করার জন্য একটা সিরিঞ্জ নিতে হবে তাতে আপনার মিশ্রন নিয়ে সেটা নাকের ছিদ্রের মাধ্যমে ভিতরে গরম পানি ও লবনের মিশ্রন দিয়ে আলতো করে ধুয়ে ফেলুন। ব্যবহারে আগে অবশ্যই সিরিঞ্জে সুই রিমুভ করে নিবেন।
আয়ুর্বেদিক রেমিডিসঃ
১। নাসাল ড্রপঃ অনু তৈল, রক্তজমাট কমাতে সাহায্য করে। এই তৈলগুলো শুরুতে হাঁচির উদ্রেগ তৈরী করতে পারে এবং নাক থেকে পানি পড়া শুরু হতে পারে। যদি সঠিকভাবে শ্বাসের সাথে নিতে পারেন তাহলে এই তৈল নাসাল ক্যাভিটি (খালি জাগয়ার) সাইনাসের ব্লকগুলো রিমুভ করতে সক্ষম।
৩। অন্যান্য যে লক্ষণগুলো যেমনঃ মাথা যন্ত্রণা, ব্যথা এবং নাসাল এলার্জি জন্য লক্ষি বিলাস রস, চ্যাবনপ্রাস, অভ্রক ভষ্ম এগুলো আপনার ইমিউনিটি বাড়াবে যদি আপনি দীর্ঘসময় ধরে ব্যবহার করেন।
৪। চিত্রাক হরিতকি চাটনি অবস্থায় পাওয়া যায় যা প্রতিদিন দুইবার ২ টেবিল চামচ দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এটার সাথে সাথে শ্বাসের সাথে সাথে গরম পানির বাষ্প সাথে জীবানু ধারা (ক্যাম্পোর, মেন্থল এর মিশ্রন) যোগ করে দিনে দুইবার নিলে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।
Writer
Md. Khairul Bashar (Naeeim)
Bachelor of Ayurvedic Medicine & Surgery (BAMS) Student, National Institute of Ayurveda (Deemed to be University), Jaipur, Rajasthan.