স্নান এর আদ্যেপান্ত ও আয়ুর্বেদিক দৃষ্টিকোন থেকে আলোচনা!
স্নান এর খুঁটি-নাটি আয়ুর্বেদিক জ্ঞানঃ
স্নান হল সমস্ত দেহ ধৌত করার মাধ্যমে পূর্ণ পবিত্রতা অর্জনের একটি মধ্যম । ধর্মীয় এবাদত এবং আচার-আনুষ্ঠান ,সামাজিক, ধর্মীয় জীবন, আত্মিক শুদ্ধিকরণ প্রতিটি ক্ষেত্রেই পবিত্রতায় প্রয়োজন হয় জলের। স্নানের উপযুক্ত – ১) বৃষ্টির জল, ২) কুয়ার বা টিউবলের জল, ৩) ঝর্ণা, সাগর বা নদীর জল, ৪) বরফ গলা জল, ৫) বড় পুকুর বা ট্যাংকের জল ইত্যাদি ।
স্নান এর উপকারিতাঃ
১) রোগজীবাণু প্রতিরোধ ,
২) ত্বকের ঔজ্জ্বল্যতা বাড়াতে,
৩) শরীর কে সতেজ করতে
৪) মনের প্রশান্তি বৃদ্ধিতে ,
৫) ক্ষুধা বৃদ্ধিতে,
৬) আয়ুকাল বৃদ্ধিতে,
৭) শরীরের শক্তি বৃদ্ধিতে,
৮) চুলকানি ,ঘাম ,ময়লা, ত্বকের জালাপোড়া কমাতে , ও আরো ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
স্নানের সঠিক পদ্ধতিঃ
স্নান কখনোই মাথায় জল ঢেলে শুরু করা ঠিক না । কারণ ঠাণ্ডা পানির সংস্পর্শ আমাদের শিরা ও ধমনিকে অতি দ্রুত সংকুচিত করে দেয় ফলে রক্ত সঞ্চালন কমে যেতে পারে। তাছাড়া আমরা অধিক গরম থেকে এসেই অনেক সময় স্নানে চলে যাই যার ফলশ্রুতিতে শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে অধিক শক্তি খরচ করতে হয়। কখনও কখনও ঠাণ্ডা বা জ্বর এর প্রাদুর্ভাব ও দেখা দিতে পারে। তাই স্থানের আগে আগে জল দিয়ে হাত-মুখ ধোঁয়া , কুলি করা , নাক পরিষ্কার করা ইত্যাদি করে নিতে হবে যেন শরীরের প্রতিটি অংশ পরিষ্কার হয়।
থ্যারাপিউটিক স্নানঃ
স্নানের সময় জলের সাথে লেবুর রস এর ব্যবহার শরীরের জীবাণু পরিশোধনে ও ফ্রেসনেস প্রাপ্তিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সুঘ্রানযুক্ত ফুলের নির্যাস ব্যবহার করা যায়।
হেমন্ত ও শিশিরের স্নানচর্যাঃ
সুস্থ থাকতে হলে হেমন্ত ও শিশিরে গরম জলকে মনে প্রাণে বন্ধু বানিয়ে নিতে হবে। কারণ শীতের মাঝে উষ্ণতা শরীরের তাপমাত্রা ভারসাম্যে রাখতে সহায়তা করে। শীত কালের গরম জল এর প্রয়োগ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও শরীরের রক্তচলাচল বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সহবাসের পর অবশ্যই স্নান অপরিহার্য অন্যথায় নানা রকমের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। যাদের ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা ও ফুসফুসজনিত সমস্যা লেগে থাকে তাদের ক্ষেত্রে গরম পানির বিকল্প নেই । তাছাড়া শীতকালে শরীর থেকে ময়লা পরিষ্কারে উষ্ণ জল অত্যাবশ্যক। উষ্ণ জল হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমতে সাহায্য করে ।
তবে খেয়াল রাখতে হবে মাথায় উষ্ণ জলের ব্যবহার হিতকর নয়, কারণ এটির প্রভাবে মাথার চুলের গোঁড়া দুর্বল হয়ে যায় , চুলের রুক্ষতা বেড়ে যায় ও চোখের শক্তি কমে যায়। তাই এইক্ষেত্রে ঠাণ্ডা জলের সাথে গরম জলের মিশ্রন করে সাধারণ তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি করে নিয়ে অতঃপর ব্যবহার করতে হবে তবে শীতকালে নিয়মিত মাথায় জলের ব্যবহার বাধ্যতামূলক নয়।
গ্রীষ্ম ও শরতে স্নানচর্যাঃ
গরমে শরীর দ্রুত ঘামায় তাই দ্রুত ময়লা ও দুর্গন্ধ হয়। তাই প্রয়োজনভেদে একাধিকবার স্নানে সমস্যা নেই । তবে প্রচণ্ড গরমে বাইরে থেকে এসে তড়িঘড়ি করে স্নানে না গিয়ে ঘাম মুছে, অতঃপর হাত-মুখ ধুয়ে তবেই স্নানের প্রস্তুতি নেওয়া উচিৎ। গরমের সময় রাতে স্নান করলে দুইটা বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। ১) খাবারের পর স্নান করতে যাওয়া যাবে না, ২) জল যেন অধিক ঠাণ্ডা না হয় সে বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে।
কখন স্নান করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারকঃ
স্নান যেমন আমাদের শরীরে প্রচ্ছন্নতা ও শান্তি প্রদান করে তেমনি কিছু কিছৃ অবস্থায় স্নান করা শরীরের জন্য অস্বস্তিকর তেমন কিছু অবস্থা যেমনঃ
১) ফ্যাসিয়াল প্যারালাইসিস,
২) চক্ষু রোগ,
৩) রজঃচক্র চলাকালীন সময়ের প্রথম দুই থেকে তিন দিন (স্নান করলেও মাথা ভিজানো যাবে না),
৪) জ্বর এর প্রাথমিক অবস্থায়,
৫) কানের সাথে সম্পর্কিত রোগ যেমন পুঁজ পড়া অবস্থায়,
৬) ডায়রিয়া
৭) খাবার হজম না হলে,
৮) খাবার গ্রহণের পর পরই,
৯) পেটে ফুলে উঠা অবস্থায়
১০) সর্দির সময়ে
…………।ইত্যাদি ।
প্রাত:কালে (সকালে) স্নানের দশ উপকারীতাঃ
প্রাতঃকালে (সকালে) স্নানের মাধ্যমে ১০টি গুন প্রাপ্ত হয়। এগুলো হলো রূপ (সৌন্দর্য), তেজ, বল (শক্তি), পবিত্রতা, স্বাস্থ্য, বুদ্ধি, দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তি, নির্লোভতা, লালসা থেকে মুক্তি, আয়ু ও যশ।
সাধ্যমতো শারীরিক ব্যায়াম ও শরীরে তেল মর্দন শেষে সকালের স্নানে উপরিউক্ত ১০ স্নানের লাভ পাওয়া যায়।
লেখক:
Md. Sanaul Kabir
Government Ayurvedic College, Nagpur.
সম্পাদনা:
ডক্টর দেবজ্যোতি দত্ত,
ব্যাচেলর অফ আয়ুর্বেদিক মেডিসিন এন্ড সার্জারি,
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ আয়ুর্বেদ, জয়পুর, রাজস্থান।